Also read in
Sunday Special Story : Anxiety
উৎকন্ঠা, বিজয়িনী ভট্টাচার্য
ডিমটা তেলে দিয়েই পেনটা ঢেকে দিল লীনা। এই লকডাউনে রান্না যেন একটা বিশাল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে! কি যে রান্না করবে রোজ রোজ, ভেবেই পায় না, এরমধ্যে মাছ-টাছও ঠিকঠাক পাওয়া যায় না! ডিম আর পনির খেয়ে খেয়ে বিরক্তি এসে গেছে, কিন্তু ঘুরেফিরে এই একই জিনিস, কি যে মুশকিল হল! ডিমটা নাড়াচাড়া করে নামিয়ে নিয়ে গোটা গরম মশলা পেনে দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন, আদা একসাথে মিক্সিতে দিয়ে দিল, মিক্সচারটা পেনে ঢেলে সব মশলা দিয়ে একটু নাড়াচাড়া করতেই মেয়ের চিৎকার কানে এল।
মনে মনে হাসল লীনা, নিশ্চয়ই বাবা-মেয়েতে লাগালাগি চলছে। বাড়িতে থাকায় এখন রাজেশও যথেষ্ট সময় দেয় মেয়েকে। যদিও প্রায়ই অনলাইন মিটিং করতে হয়, তবুও এই ওয়ার্ক ফ্রম হোম হওয়ায় মানুষটা চোখের সামনে তো আছে, এই এক স্বস্তি! রাজেশ- দেবলীনার নয় বছরের বিবাহিত জীবন, বিয়ের প্রায় সাত বছরের মাথায় টুপুরের আগমনে এখন পরিপূর্ণ সংসার। বাবা মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসে। লীনারও মেয়েই সব!
পেনে একটু জল দিয়ে, গ্যাসটা সিমে রেখে লীনা উুঁকি মারে বেডরুমে। না, এখানে নেই, তবে নিশ্চয়ই পাশের রুমে বাবা – মেয়ে। পাশের রুমে গিয়ে লীনা দেখল রাজেশ খুব মন দিয়ে লেপটপে কি একটা করছে। কিন্তু টুপুর তো এখানে নেই। তাহলে মেয়ে নিশ্চয়ই ড্রয়িংরুমে। কিন্তু না, ড্রয়িংরুমেও টুপুর নেই!
হঠাৎই একটা অজানা আশঙ্কা ঘিরে ধরে লীনাকে। শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে যায় একটা ঠান্ডা স্রোত। তবে কি টুপুরকে….. না না, আর ভাবতে পারে না লীনা। দৌঁড়ে গিয়ে রাজেশকে ডাকে। রাজেশ হেসে লীনাকে বলে, ‘কি যে করো না, কোথায় আর যাবে, ঘরেই কোথাও লুকিয়েছে দেখো!’ লীনার পা দুটো যেন পাথর হয়ে গেছে!
গত পরশুদিনের নিউজে দেখালো পাঁচ মাসের একটা শিশুকে অপহরণ করে মেরে ফেলেছে! ভাবা যায়! নিজেকে এখন মানুষ বলতেও লজ্জা হয়! অপহরণকারীদের জন্য শুধু ঘেন্না! ছিঃ ছিঃ!! রাগে, দুঃখে সেদিন সারারাত ঘুমোতে পারেনি লীনা! বারবার বাচ্চাটার চেহারা মনে পড়ছিল।
লীনার মনে শুধু কুচিন্তা আসছে! টুপুর চিৎকার দিয়েছিল না একটু আগে! তাহলে কি কেউ ঘরে এসছিল!
এখন যেন অপহরণ, খুন, ধর্ষণ এগুলো খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে! প্রায়ই ঘটছে এমন সব ঘটনা। মেয়ে শিশু জন্ম হলে যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায় চিন্তা!
এখন যেন অপহরণ, খুন, ধর্ষণ এগুলো খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে! প্রায়ই ঘটছে এমন সব ঘটনা। মেয়ে শিশু জন্ম হলে যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায় চিন্তা!
কি মনে হতে লীনা দৌঁড়ে গিয়ে সদর দরজাটা দেখে, নাহ্, দরজা তো বন্ধ। তাহলে, টুপুর কোথায় গেল? না, লীনা সত্যিই আর ভাবতে পারছে না! দরজার পাশে ফ্লোরেই বসে পড়ল!হঠাৎ দৌঁড়ে এসে গলা জড়িয়ে মেয়ে বলল,”মাম্মা, আমি এখানে!”
এই গল্পের লেখিকা বিজয়িনী ভট্টাচার্য শিলচরে জন্মগ্রহণ করলেও কর্ম ও বিবাহসূত্রে হাইলাকান্দিতে থাকেন।শিক্ষকতা পেশা এবং আবৃত্তিটা লেখিকার নেশা।রোটারি ক্লাব সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত
Comments are closed.