Also read in

Sunday special, A Story

মরিয়ম বিবি

চুল নাই নেড়ি বুড়ি
চুলের লাইগ্যা কান্দে
আর কচুপাতার ঢিফা দিয়া
মস্ত খোঁপা বান্ধে…….

নিজের দাওয়ার উপর পা ছড়িয়ে বসলো মরিয়ম বিবি। নিজের মাথায় হাত বুলালো কি জানি ওকে দেখে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে নাতো সাকিনা। কে জানে। এখনও মাথায় ওই দুচার গাছি চুল আছে যা। নইলে একসময় কোমর ঝাঁপিয়ে মাথাভর্তি চুল ছিল মরিয়ম বিবির। অল্প অল্প পানাভরা পুকুর ছিল মরিয়মদের। ওই পুকুরে উঁচু বাঁশের ঘাট থেকে লাফ দিত মরিয়ম। শব্দ হতো ঝপাঙ।সাঁতার কাটত। তখন চারদিকে ছড়িয়ে পড়তো সেই কালো ঘন চুল। কখনো কোন কোনদিন লুকিয়ে লুকিয়ে বেদানা, মনোয়ারাদের সঙ্গে ধলেশ্বরী নদীতেও যেত। আব্বা দেখলে ভীষণ রাগ করত। একদিন আব্বাকে নদীর পাড়ে দেখে ডুবে সাঁতার দিচ্ছিল মরিয়ম। কিন্তু জলের উপর ভেসে রইল তো সেই চুল। ওই চুল দেখেই তো চিনে ফেলল আব্বা। লাঠি উঁচিয়ে তাই বলে বলে গেছিল, ‘আইজ বাড়িত যাইলো।’

তবে ওই খোলা চুলে উকুনও বাসা বাঁধত। এত কামড়াতো। মা তখন মাথায় কেরোসিন মাখিয়ে দিত। একদিন কমরুল চাচা আলগাপুরের বাজার থেকে উকুনের যম এনে দিল। ওটা মেখে উকুন কিছু কমল। কিন্তু চুল কমল না। চুল আরও ঘন আরো লম্বা হতে লাগল। পাঠশালা স্কুলে যখন যেত দিদিমণি বলতো কেশবতী কন্যা। ওই কেশবতীর অর্থ পড়ে জেনেছে মরিয়ম। কিন্তু ওই কেশবতী আজ দু- চার গাছির অধিকারিনী হলে চুল নাই নেড়ি-ভুড়ি ছড়া কাটবে সাকিনা? মরিয়ম বিবির এখন ভীষণ দুঃখ হল, রাগও হল। ওই সাকিনা শুন।

এখন উঠে দাঁড়ালো মরিয়ম বিবি।
কিতা?

আইজ আমার চুল নাই কইয়া তুই নেড়ি বুড়ি কইরে? আগে আমার কত চুল আছিল জানস নি তুই? তোরা দশ জনর চুল জমাইলেও একলগে অতটা হইত নায়। বুঝছস নি পুরি? মাইগো মাই। আমি তুমারে কইছি নাগো।

তে তুই কারে কইছস? ক।
কেউরে কইছি না গো।
কিতা হইসে চাচি?এখন রহিম আসতেই সাকিনাকে ছেড়ে রহিমকে নিয়ে পড়ল মরিয়ম বিবি।
কিতা হইল? তুই নু কইলে আমারে বিপিএল-র চাউল পাওয়াইয়া দিবে?
দিমু। দিমু।
কবে দিবে?
অউতো আইজওউ যাইমু ওয়ার্ড কমিশনারের কান্দাত। কাইল লাগাল পাইসলাম বেটার।
তে মাতলে না?
না বহুত মানুষ আছিল।মাতা গেসে না।
তুমি আইজ ভিক্ষাত বার হইসও নানি?
অউতো আইলাম।
ওউ চাউল ওটা পাই গেলে আমার আর ভিক্ষাত বারইতে লাগলো নানে।
অয়। ঠিক কইসো চাচি।
ওদিকে কে মারি লাইল। আমরারে মারি লাইল, বলে চেচাচ্ছে। রহিম এখন ছুটে গেল।

মরিয়ম বিবি আবার থপ করে বসে গেল। ঘরে একটা চেয়ার আছে। প্লাস্টিকের চেয়ার। ওটাকে ঝেড়েপুছে রাখে মরিয়ম। কিন্তু বসে আর কোথায় ? বসে তো সেই মাটিতেই। নদীর দিকে তাকাল মরিয়ম বিবি। ঘরের নিচেইতো বরাক নদী। এখন ছোট্ট হয়ে বইছে। একটা ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকা ভাসছে। মাঝির মুখটা দেখতে পাচ্ছে না। আজকাল সব কিছু কেমন ঝাপসা দেখে। আন্দাজে ঠাওর করতে হয়। তবু তো দেখে! ওই যে সাকিনার নানী কিছুই দেখতে পায় না। আহারে,দেখতে না পেলে যে কি কষ্ট। কারা নাকি বলেছে কোথায় ফ্রিতে চোখ কাটানো হবে।তখন বোধহয় যাবে সাকিনার নানি। ওরা নাকি ফ্রিতে চশমাও দেবে। ভালো। ভালো। সাকিনার নানি যদি আবার দেখতে পায় খুব ভালো।সাকিনার নানীর জন্য অস্থির হয়ে উঠল।ও সাকিনার নানি? সাকিনার নানি? নানি বের হলো না। বেরিয়ে এলো সাকিনা।

কিতা অইলো গো?
তোর নানি কানও?
নানিয়ে অখন গোসল করবা।
খাইছইন না আব?
না বলে ঢুকে যেতে ছিল সাকিনা আবার বেরিয়ে এলো। এখন খেয়াল করলো মরিয়ম বিবি সাকিনার হাতের মেহেন্দির কাজ।
মেহেন্দি লাগাইসস?
অয়।
কই পাইলে মেহেন্দির পাতা?
পাতা নাগো।
তো?
ইতা কিতা মেহেন্দি। দুকান থনে আনছি।
অ। দুকানও পাওয়া যায়?
অয়।
এখন মনে পড়লো মরিয়ম বিবির ওদের বাড়িতে মেহেন্দির গাছ ছিল। ওরা পাতা শিলে বেটে রাখত কতক্ষণ। তারপর হাতে মাখত। হাত রাঙ্গিয়ে কি যে আনন্দ হত। আকাশে তখন পাখি উড়ে যেত। মনের ভেতরও উড়ত কত পাখি। আহারে ফরফর করে দুটো ডানা মেলে। ধলেশ্বরীর জল তখন কলকল করে ছুটত। কারা জানি গাইত-
আসি বলে গেল বন্ধু আইল না
যাইবার কালে সুনা বন্দে
নয়ন তুলি চাইলে না
আসবে বলে আশায় রইলাম আশাতে নিরাশা হইলাম
বাটাতে পান সাজাইয়া থইলাম
তবু বন্ধু আসি খাইল না…..

তুমি আইজ রানতায় নানি গো?
সাকিনা বলতে বলতে আবার ঘরে ঢুকে গেল।
মরিয়ম বিবি আবার নদীটার দিকে তাকালো। বেশ বাতাস আসছে। নদী থেকে উঠে আসা হিমেল বাতাস। কতটা বক উড়ে গেল। নদীর উপর দিয়েই। নদীটা আছে বলে মরিয়ম বিবিও আছে। নদীটা ছেড়ে এখন তাই কোথাও যেতে মন চায় না। বর্ষায় কেমন ফুলে-ফেঁপে ওঠে। যেন একটা দামাল মোষ। কত কাঠ ভেসে যায়। গাছ ভেসে যায়। কখনো ঘরবাড়িও। একবার তো একটা বউও ভেসে গেল। বউ না মেয়ে কে জানে? কার বাড়ির বউ? কাদের বা মেয়ে আহারে! দেখে বড় কষ্ট হয়েছিল মরিয়ম বিবির। মনটা কেমন বিষাদে ভরে গেছিল। এখন আরেকটা নৌকা যাচ্ছে। নৌকার গলুই-য়ে মনে হচ্ছে একটা পাখি বসে আছে। তাহলে তো ভালই দেখতে পায় মরিয়ম বিবি। নিজে নিজেই এখন হাসলো। সাকিনা মুরগিগুলোকে খাবার দিতে বেরিয়েছিল, মরিয়ম বিবিকে হাসতে দেখে থমকে দাঁড়াল।
কিতা অইলো গো নানি?
কিচ্ছু না।
তে হাসিরায় কেনে?
তে কিতা খান্দিতাম নি?
না।
তে?
না। যাও রান্ধ গিয়া।
যাইমু।
আবার নদীর দিকে তাকায়। কে যেন কাপড়-চোপড় নিয়ে নাইতে নামছে। আবার একজন কাঁখে কলসি নিয়ে উঠছে। এমা একটা ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকাকে ঘাটে বাঁধছে। কে এল? এটা তো শুধু ওদের তিন চার ঘরেরই ঘাট। তবে ওদের বাড়িতেই কেউ এলো নাকি? কে জানে? আহারে এই ঘাটেই ক’মাস আগে রহিম ধাক্কা খেয়েছিল এক লাশের সঙ্গে। একটা মেয়ের মানে বস্তায় বাঁধা লাশ। তাও টুকরো টুকরো করা। উপরে তুলে খুলতেই বমি হয়ে গিয়েছিল রহিমের। কতদিন নাকি খেতে পারতো না। চারিদিকে শুধু পচা শবের গন্ধ। মরিয়ম বিবির মনটাও খুব খারাপ হয়ে গেছিল। মানুষ কত বদমায়েশ কত পিশাচ হতে পারে। শেষে রহিমকেই পুলিশের সঙ্গে থানায় যেতে হলো। সে আরেক কাহিনী। এমা লোকটা এখন গান ধরেছে-

ও আমার সুনা বন্দুরে
তুমি কোথায় রইলায় রে
দিনে রাইতে তুমারে আমি
খুজিয়া মরিরে

বাঃ। গলাটা বেশ ভাল। আর বেশ জোরে জোরে গাইছে- মরিয়ম বিবিও গায় আমার সুনা বন্দুরে…..
রহিমের ভাই কতটা চুঙ্গা পিঠা বানাবার বাঁশ নিয়ে এসেছে। ওই সাকিনাদের পেছনেই রহিমের ঘর। ওদের ঘরে কারেন্ট আছে আর টিভিও আছে।রহিমের বউটা গিয়ে পালটি মেরে বসে টিভি দেখে। টিভির ভেতরে নাকি সিরিয়াল। সিরিয়ালটা যে কি জিনিস কে জানে। ওখানে নাকি সুন্দর সুন্দর মানুষ সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে ঘুরে বেড়ায়। একটা শয়তান মহিলা থাকে। ভীষণ শয়তান। চুড়েল, ভূত এত আরো কত কিছু থাকে। বউটা ওতেই মজেছে।রহিমকে সময়মতো খাওয়ারও বানিয়ে দেয় না। এ নিয়ে ভীষণ অশান্তি। এখন নাকি বলছে বন্ধনের লোন নিয়ে রহিমকে টিভি কিনতে।

বিরইন আনছস নি? চোঙ্গা আনলে?
অয়। চাচায় আনিয়া দিসইন।
কোন চাচায়?
আলগাপুরর।
বানা।বানা বেটা।
অয় বানাইলে তুমারেও দিমু।

এখন একটা ঘুঘু ডাকছে দূরে কু কু কু কু উ কু উ কুউ। কান পেতে শুনে মরিয়ম বিবি। ওদের গায়ের কাছে মাঠে একজন জাল দিয়ে ধরত। ওরা বলতো পাড়কি। ওই চাচার নামই হয়ে গেছিল পাড়কিওয়ালা। ইস পাখিগুলো জালের ভেতর আটকা পড়ে কেমন ফতফত করে ছটপট করত। তখন ভীষণ কষ্ট হতো মরিয়মের। মুখ ফুটে বলতেও পারত না ও চাচা পাখি ধরিও না। আর বললেও কি আর ওর কথা শুনত ওই পারকিওয়ালা চাচা? ভিক্ষের চালগুলো পড়ে আছে। কিন্তু রাঁধতে ইচ্ছে করছে না। আরে ওই যে সলমান ডাক্তারের বাড়ি কাজ নিয়েছিল। ভালোই চলছিল কিন্তু একদিন ঘরে ফেরার পথে কলার খোসায় পা দিয়ে পিছলে পড়ে ডান হাতটাই ভেঙ্গে গেল। করগুয়ে কলার বাকল ফালাই থইল রে? আমার অখন কিতা হইবো রে……… বলে বলে খুব কেঁদেছিল মরিয়ম বিবি। কারা জানি ১০৮ অ্যাম্বুলেন্স ডেকে ওকে মেডিক্যাল কলেজে দিয়েছিল। কোনমতে ঠিক তো হল কিন্তু আর কাজ তো করতে পারেনা মরিয়ম বিবি। সেই থেকে ভিক্ষে। নইলে নিজের ছেলেকে এক বছরের পর আর এখন অব্দি চোখে দেখল না। শুনেছিল সত্যি কি মিথ্যে ছেলেটা বড় হয়ে আরব গেছিল। হু হু করে নদী থেকে বাতাস এল। শব্দ করে আকাশে এক ঝাঁক পাখি উড়ে গেল। মাথা তুলে দেখল মরিয়ম বিবি। নৌকার লোকটা এখন আবার গান ধরেছে-

মাইনসর যৌবন মেঘর ফোঁটা
দেশ বিদেশে রইল খোঁটা
আম কাঠল তো আষাঢ়ের পর থাকে না
এ যৈবনের গৌরব করা ভালো না……

কে মানুষটা? কেন এল? ওদের ঘাটেই বা নৌকা কেন বাঁধল। যাক্ গে, মরিয়ম বিবি এখন পান বানিয়ে খায়। একটা বিড়ি টানলে ভালো লাগতো। কিন্তু বিড়ি তো শেষ হয়ে গেছে। পানটাই সুপারি চুন সমেত চিবিয়ে চিবিয়ে খায় মরিয়ম । দু তিনটে দাঁত পড়েছে তবে এখনো অন্য দাঁতগুলো ঠিক আছে মরিয়ম বিবির। রক্ষে। নইলে কি যে হত। ওই যে সাকিনার নানি তো সুপুরি খুঁটে খুঁটে খায়। এখন কুল খেতে খেতে বেরিয়ে এল সাকিনা। আগে কত কুল মেখে খেত মরিয়ম। লঙ্কা, পেঁয়াজ আর ধনেপাতা দিয়ে। খেতে যে কি স্বাদ লাগত। এখন একটা মুখে পরলে মুখটা টক হয়ে যায়। ও নানী গুয়া খাইরায়?
অয়
আমারে একটু থাকলে দেওনাগো।
তুইন নু বরই খাইরে?
না। নানিয়ে কইসলা বিহানে।
ল।

এখন কয়েকটা টুকরো সুপুরি দেয় সাকিনাকে। এগুলো ওইদিন ভিক্ষায় যেতে যেতে রাস্তা থেকে কুড়িয়েছিল। গাছটা রাস্তার দিকে হেলে আছে কিনা। তাই লাল লাল সুপারি গুলো রাস্তায় টুপ টুপ করে পড়ে।
ও সাকিনা।
কিতা।
সুপুরি নিয়ে যেতে যেতে আবার ফিরল সাকিনা।
তোর নানির টাইন বিড়ি আসেনি?
আসে । আসে।
তে একটা আমারে আনিয়া দিবে নি?
দিমু নে।
কুল খেতে খেতে সুপারি নিয়ে চলে গেল সাকিনা। মরিয়ম বিবি আবার নদীর দিকে তাকাল। নদীর উপরে এখন বড় মায়া মায়া রোদ।
আরে বড় হাল্লাগোল্লা। শোরগোল।
কিতা হইসে রে সাকিনা? ও সাকিনা।

সাকিনা এল না। রহিমের ভাইটা জবাব দিল। ভাবীয়ে কলত জল আনাত গিয়া একজনর মাথা ফাটাই লাইসন বুঝচ নি চাচি?
কস কিতা বেটা।
অয়। অখন পুলিশ আইয়া তানো জেল ঢুকাইব।
সাকিনা? তাহলে সাকিনা নেই? সাকিনা কলে জল ভরতে গেছে। মরিয়ম বিবিকেও মাঝে মাঝে ভরে দেয়। ওতেই খাওয়ার জল টা হয়ে যায়। কোথায় বাজনা বাজছে। বিয়ের বাজনা। মরিয়মেরও প্রথম বিয়ের সময় সবাই গান গেয়েছিল ঢোল দুতারা বাজিয়ে – ঢোল বাজে বাতাসে।

হাতে মেহেন্দিও লাগিয়েছিল। সাইকেল আর কাকনি দিল না বলে এক বছরের মধ্যেই তালাক দিয়ে দিল। তারপর হলো দ্বিতীয় বিয়ে। ওই লোকটার আগের একটা বাজা বউ ছিল। বিয়ের বছর ঘুরতেই কোল জুড়ে একটা ছেলে এল মরিয়মের। কি আনন্দ। কি আনন্দ আহারে। কিন্তু ছেলেটা দুধ ছাড়তেই মরিয়মকে তালাক দিয়ে দিল ওই স্বামী। আর ছেলেটাকে রেখে দিল। অনেক কাঁদল মরিয়ম ছেলেটাকে পাওয়ার জন্য। অনেক মোল্লা মুরব্বি ধরল কিন্তু ছেলেটাকে আর পেল না। তারপর তৃতীয় বিয়ে। একজনের তিন নম্বর বউ হল। অসুস্থ একজন মানুষের। অবস্থাপন্ন মানুষের। শেষে দেখল ওকে শুধু সেবা শুশ্রুষা করার জন্য বিয়ে করা হয়েছে। সারা বাড়িঘরের কাম কাজ। হাঁপিয়ে উঠত মরিয়ম । একদিন চোপা করতেই ওকে তালাক দিয়ে দিল স্বামী। আবার বাপের বাড়ি। এমন কি কপাল একদিন ক্ষেতে কাজ করতে করতে আব্বা বাজ পড়ে আর আম্মিও…..।

ঘর জমিনও জ্ঞাতিরা দখল করে নিল। আর কিছু খেয়ে নিল নদী। শেষে এই ঘনিয়ালায় নদীর পাড়ে বসতি। কি আর করে মরিয়ম বিবি? তবে ছেলেটার কথা মাঝে মাঝে খুব মনে হয়। মনে হয় কোনদিন হয়তো আম্মা আম্মা ডেকে আসবে ওর ছেলে। কোথায় বসাবে ছেলেটাকে। মরিয়ম বিবি এখন নিজের ঘরটার দিকে তাকায়। টিনের চাল, টিনের বেড়া। দরজাও টিনের।

এমা সন্ধ্যে উতরে যাচ্ছে। আজ না রাঁধল, না খেল মরিয়ম বিবি। ভিক্ষের চালের থলিটা ওই তো রাখা আছে। পেটটা যেন ভরে আছে অমৃতে। কারা একটা চাদর দিয়ে গেছিল ওই চাদরটাকে এখন ভালো করে গায়ে জড়ালো মরিয়ম বিবি। তারপর আকাশের দিকে তাকালো। ঝলমল করে মুখ বাড়িয়েছে মস্ত বড় চাঁদ। ওদিকে চোঙ্গা পোড়াচ্ছে রহিমের ভাই। আগুনটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। পায়ে পায়ে উতরাই ভেঙে এখন নদীর দিকে নামতে থাকলো মরিয়ম বিবি। কেমন হিমেল হাওয়া। নৌকার ভেতর অজানা মানুষটা এখন আবার গান ধরেছে। জন্ম মৃত্যুর গান-

কেমনে আছিলাম আমি
পিতার মস্তকে
কি সন্ধানে আইলাম আমি মায়েরও উদরে
এমন সুন্দর তনু বানাইল কানাইয়া
নাহি দিল সোনা রূপা নাহি দিল সিসা।

লেখিকা ঝুমুর পান্ডে দীর্ঘদিন ধরে লেখালেখির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তার লেখা তামিল, তেলেগু, উড়িয়া, মারাঠি, ইংরেজি,হিন্দি, অসমিয়া, মনিপুরি ইত্যাদি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হয়েছে। সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার এবং সম্মান। তার গল্প “মধুরাবতী সাঁতার কাটে” নিয়ে দূরদর্শন টেলিফিল্ম তৈরি করেছে। লেখিকা নারী আন্দোলন এবং সমাজ সেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। লেখিকা সেতারও বাজান।

Comments are closed.