Also read in

The identity of the 'deaf & dumb' boy rescued from Karimganj is established. The mother herself left him on the street.

একটি সতেরো কিংবা আঠারো বছরের ছেলে। কথা বলতে পারে না। কালা-বোবা। মানসিক ভারসাম্যহীন। নিজের বেশি কিছু করার ক্ষমতা নেই। এমন অসহায় ছেলেকে মা রাস্তায় ফেলে চলে গেলেন! বলা উচিত, মা কোলের সন্তানকে পরিত্যাগ করলেন! বাস-ট্রাক কিংবা কোনও গাড়ির তলায় চাপা পড়ে মারা গেলে পিছা ছুটবে, এমন আশায় রাস্তায় অসহায়, অক্ষম ছেলেটাকে একা ফেলে চলে গেলেন মা! মনে হতে পারে এটা কোনও গল্পের অংশ। কিন্তু না। গল্প নয়! সত্য ঘটনা! মা মানেই স্নেহময়ী, সহনশীল, করুণাময়ী- কথা গুলো মিথ্যে প্রমাণিত করলেন আজকের এই মা। মিথ্যে হয়ে গেল বিখ্যাত সেই বাক্য ” কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কখনো নয়”। অথচ আশ্চর্যজনক ভাবে প্রথমে ছেলেটি শুধু “মা” কথাটি উচ্চারণ করতে পারছিল। ব্যাকুলতার সঙ্গে বোঝাচ্ছিল, সে মার কাছে ফিরে যেতে চায়!

ঘটনা অনুসারে, বেশ কিছুদিন আগে আজাদ সাগর রোডের সিডব্লিউসি কর্মকর্তারা হঠাৎ করে একটি ছেলেকে করিমগঞ্জ শহরের রাস্তায় ঘুরতে দেখে করিমগঞ্জ থানায় নিয়ে যান। ছেলেটিকে পরে আদালতে উঠানো হয়। আদালতের নির্দেশে অসুস্থ ছেলেটিকে চিকিৎসার জন্য শিলচর মেডিক্যাল কলেজে প্রেরণ করা হয়।মেডিক্যাল কলেজে অনেকদিন চিকিৎসা চললেও দীর্ঘ দিন সেখানেও রাখা সম্ভব নয়। ফলে ছেলেটিকে কোথায় রাখা হবে তা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এরপর ‘সক্ষম’ নামক সংস্থা ছেলেটির সাহায্যে এগিয়ে আসে। সবচেয়ে প্রথমে প্রয়োজন অনুসারে সংস্থাটি ছেলেটির স্পিচ থেরাপির আয়োজন করে। সংস্থার জয়েন্ট সেক্রেটারি মেডিক্যাল কলেজের স্পিচ থেরাপিস্ট ছেলেটির স্পিচ ডিসেবিলিটি নিয়ে কাজ করেন। এর ফলে ছেলেটি আরো একটু স্পষ্ট করে শব্দগুলো উচ্চারণ করতে সক্ষম হয়। ফলে কিছু কথা তার কাছ থেকে বোঝা সম্ভব হয়।

এরপর সক্ষম’র পক্ষ থেকে “এরা আমাদের” সংস্থাকে বাচ্চাটির দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। উল্লেখ্য,’এরা আমাদের’ সংস্থাটি দিব্যাঙ্গ বাচ্চাদের নিয়ে একটি হোম চালায়। মানবিকতার তাগিদে সংস্থাটি রাজি হলে কোর্ট এবং করিমগঞ্জের জেলা উপায়ুক্তের নির্দেশে ছেলেটির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় ‘এরা আমাদের’ হাতে।

সেই সঙ্গে ‘সক্ষম’র নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে ছেলেটির বাড়ি তথা অভিভাবকের খোঁজখবর চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত খোঁজও পাওয়া যায়। জানা গেল, ছেলেটি আগরতলার। আগরতলার একটি এনজিও ‘অভয় মিশন’ জানালো যে সে আগরতলার একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। সংস্থা আরও জানালো, বাচ্চাটিকে গত ডিসেম্বর মাসে হোম থেকে সুস্থ করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছিল। দৈনন্দিন কাজকর্ম কিভাবে করতে হয় সেটাও সংস্থার পক্ষ থেকে ছেলেটিকে ট্রেনিং এর মাধ্যমে শেখানো হয়েছিল। পরে জেলা উপায়ুক্ত ও শিশু কল্যাণ কমিটির কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তার মার হাতে তুলে দেওয়া হয় ছেলেটিকে।অথচ সেই মা আবার ছেলেটিকে এভাবে করিমগঞ্জের রাস্তায় ফেলে চলে গেলেন শুধু নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য। অন্য ছেলেদের মত স্বাভাবিক না হওয়ায় মায়ের ভালোবাসায়ও চির ধরে গেল।

‘সক্ষম’র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সেক্রেটারি মিঠুন রায় ঘটনাটির উল্লেখ করে আমাদের বললেন, ” এই ছেলেটি তার মায়ের কাছে ফিরে যাক এবং তার ঠিকানা মিলুক, এটাতো আমরা অবশ্যই চাই‌। সঙ্গে মনে করি, আরো যারা এ ধরনের মানসিক ভারসাম্যহীন বাচ্চারা রয়েছে, যারা অভিভাবকহীন, যাদের মা-বাবা নেই তাদের জন্য এই অঞ্চলে একটা হোমের খুব প্রয়োজন। এজন্য আমরা খুব চেষ্টা করছি। আজকাল অনেকেই অল্পবিস্তর সাহায্য করছেন। কিন্তু সেটা যথেষ্ট নয়।’বিহেভিয়ার থেরাপি’র মাধ্যমে তাদেরকে জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা খুব প্রয়োজন। তারাও মানুষ, তারা আমাদেরই একজন, এই মানসিকতাটা আমাদের মধ্যে গড়ে ওঠা খুব প্রয়োজন। সেই সঙ্গে তাদের একজন লিগেল গার্জিয়ানও খুব প্রয়োজন। মানসিক প্রতিবন্ধী বাচ্চারাও আমাদেরই একজন, এটা মেনে তাদেরকে ভালোবাসার মানসিকতা সবার মধ্যে গড়ে ওঠুক, এটাই আশা করছি।”

আমরাও আশা করছি, ছেলেটির মা নিজের ভুল বুঝে ছেলেটিকে আবার ভালোবাসার বন্ধনে নিজের কাছে টেনে নেবেন। সরকারি খাতায় যার নাম ‘এক্স’ হিসেবে এখন পরিচিত, সেই ছেলেটি তার মা বাবার দেওয়া নামটি ফিরে পাবে। সর্বোপরি তাঁর নিজস্ব ঠিকানা সে খুঁজে পাবে।

Comments are closed.

error: Content is protected !!