Also read in

Toilet Day: But where are public toilets in Cachar

প্রসঙ্গ বিশ্ব টয়লেট দিবস: দশকের পর দশক ধরেও শিলচরে পাবলিক টয়লেট বানাতে ব্যর্থ পুরসভা

১৯ নভেম্বর তারিখটিকে বিশ্ব টয়লেট দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর উদ্দেশ্য শৌচালয় ব্যবহার নিয়ে সমাজকে সচেতন করে তোলা এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যাতে এই সুবিধাটুকু পান, এটা নিশ্চিত করা। যদিও সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়েছে ভারতবর্ষ একটি ওপেন ডেফিকেশন ফ্রি দেশ, অর্থাৎ দেশে কেউ প্রকাশ্যে শৌচ কার্য করেন না। বলা হয়েছে প্রতি ঘরে শৌচালয় বানাতে বদ্ধপরিকর সরকার। তবে শিলচরের মত শহরেও প্রয়োজনীয় এলাকায় পাবলিক টয়লেট নেই, অতীতে যতগুলো শৌচাগার বানানো হয়েছিল প্রায় প্রত্যেকটি অকেজো এবং জনগণের কাজে আসেনা। একটি সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, সাধারণ পরিস্থিতিতে শিলচরে প্রতিমাসে অন্তত দুইলক্ষ লোক বাইরে থেকে আসেন। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ মহিলা। অনেক সময় প্রকাশ্যেও শৌচকার্য সারেন পুরুষরা, তবে যন্ত্রণা পোহাতে হয় মহিলাদের।

কাছাড় জেলায় বর্তমান জেলাশাসক সহ আগের দুই জেলাশাসকই মহিলা ছিলেন। বিভিন্ন সময় মহিলাদের এই অসুবিধার কথা তাদের কানে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিলচর পুরসভায় গত পাঁচবছরে যে বোর্ড শাসন করেছে, সেখানে প্রায় অর্ধেকের বেশি সদস্য মহিলা ছিলেন। অথচ এত বড় একটি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রায় কোনও উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন এবং পুরসভা। বিশ্ব টয়লেট দিবস বিষয় নিয়ে অনেকেই হয়তো অনুষ্ঠানে ভাষণবাজী করবেন বা ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বাহবা কুড়োবেন, তবে যাদের কাছে ক্ষমতা রয়েছে তারা এব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নেননা।

পুরসভা নির্বাচনে অতীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দল শিলচর শহরে প্রয়োজনীয় জায়গায় জনগণের জন্য শৌচালয় বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও কখনোই এটা বাস্তবে রূপ নেয়নি। শহরে দু-একটি জায়গায় জনগণের জন্য শৌচালয় রয়েছে তবে সেগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বন্ধ। গান্ধীবাদের পাশে যে শৌচালয়টি বানানো হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষের যাওয়ার প্রায় সুযোগ নেই। পুরাতন অন্নপূর্ণা সিনেমা হলের উল্টোদিকে একটি ছোটখাটো পাবলিক টয়লেট রয়েছে যেটা বর্তমান সাংসদ রাজদীপ রায়ের বাবার নামে উৎসর্গ করা। সেটাও জনগণের কাজে আসে না। রাজদীপ রায় সাংসদ হওয়ার দেড় বছরের বেশি কেটে গেলেও এব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেননি তিনিও। এছাড়া হাসপাতাল রোডে একটি পেইড টয়লেট রয়েছে যেটা সুস্থ ভাবে কাজ করে।

শিলচর পুরসভার বর্তমান সিইও সুমিত সত্যওয়ানকে এব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “শহরে কোন কোন জায়গায় পাবলিক টয়লেট রয়েছে এটা আমার জানা নেই। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখতে পারি তবে এতে অনেক সময় লেগে যাবে, এখনই আপনাদের এব্যাপারে কিছু বলতে পারছিনা।” এবার কথা হচ্ছে প্রশাসন যে ব্যক্তিকে পুরসভার সিইও পদের দায়িত্ব দিয়েছেন সেই ব্যক্তিটি আদৌ জানেন না শহরে কোন কোন জায়গায় পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এছাড়া তার এব্যাপারে জানার খুব একটা আগ্রহ নেই।

একই অবস্থা ছিল নির্বাচিত পুরসদস্যদেরও। অতীতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে প্রায় প্রত্যেকেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। দুইবছর আগে শহরের পুরকমিশনার বীরব্রত রায় বলেছিলেন, তার এলাকায় পাবলিক টয়লেট বানাতে হলে অন্তত ২০২১ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অথচ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার মেয়াদ ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্তই ছিল। এতে স্পষ্ট হয়ে যায় শহরে পাবলিক টয়লেট বানানোর ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কোনও উৎসাহ ছিলনা।

শিলচর বরাক উপত্যকার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর, উপত্যকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় শিলচরে রয়েছে। তিন জেলার অনেক মানুষ বিভিন্ন কাজে দিনভর শিলচর শহরে কাটান। পাবলিক টয়লেট না থাকার দরুন তাদের যেসব সমস্যা পোহাতে হয় এটা কাউকে বলার নয়। উপত্যকার কোনও সাংসদ বা বিধায়কদের কোনওদিন এব্যাপারে খুব একটা উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

বিশ্ব টয়লেট দিবস প্রতিবছর পালিত হয়, এসব সমস্যা এই দিনটিতে আমাদের মনে পড়ে এবং পরে আমরা ভুলেও যাই, সমস্যা সমাধান হয়না।

Comments are closed.