Also read in

Torch march in Silchar for protection of identity, self-respect and fundamental rights

অস্তিত্ব, সম্মান ও নাগরিক অধিকার রক্ষায় ‘সবার জন্য সবার মহা মশাল মিছিল’

এনআরসি নিয়ে দাবি পেশের ক্ষেত্রে পনেরোটা নথিকেই প্রামাণ্য হিসেবে গ্রহণের মূল দাবিতে আগামী ২রা অক্টোবর মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় রাঙ্গিরখাড়ি মোড় থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম মূর্তি সংলগ্ন সমাবেশ পরিসর পর্যন্ত এক মহা মশাল মিছিলের ডাক দিল সম্মিলিতভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন। নাগরিক পঞ্জি নবায়ন প্রক্রিয়াতে খসড়া থেকে বাদ পড়া মানুষের নাম অন্তর্ভূক্তির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ দ্বারা নাগরিকত্বের পাঁচটি মৌলিক নথিপত্রকে অগ্রহণযোগ্য ঘোষণার ফলে জনগণের মনে ভয়ংকর আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষত আসামের ভাষিক সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব তীব্র সংকটের সম্মুখীন। কর্তৃপক্ষের এই অমানবিক ও আইনবিরুদ্ধ পদক্ষেপের প্রতিবাদে এবং এনআরসির চূড়ান্ত খসড়া থেকে নাম বাদ পড়া সর্বস্তরের নাগরিকের নাম নথিপত্রের ভিত্তিতে নাগরিক অন্তর্ভূক্তির দাবিতেই সম্মিলিত মহা মিছিল। এনআরসিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংগঠনের বিভিন্ন স্বতন্ত্র দাবি অভিমত অবস্থান ও বক্তব্য রয়েছে। তবে ১৫ টি নথির অন্তর্ভূক্তির দাবিতে সবাই একমত, তাই এই কর্মসূচির একমাত্র দাবি হচ্ছে নাগরিক পঞ্জি নিয়ে প্রথম যে ১৫ টা নথির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, এনআরসি খসড়া থেকে বাদ যাওয়া সবার নাম সেই পনেরোটা নথির ভিত্তিতে করতে হবে ।

এই কর্মসূচির অন্যতম সমর্থক ডঃ রাজীব কর আমাদের প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎকারে জানালেন, “কোন্ সংগঠন এটা আহ্বান করেছে সেটা বড় কথা নয়, সংগঠনগুলোকে সংগঠিত করতে হবে।” ডঃ কর তার একান্ত ব্যক্তিগত মতামত ব্যক্ত করে বলেন, “ইন্দিরা মুজিব চুক্তি, পুরনো এনআরসি নথি, নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট, রিফিউজি সার্টিফিকেট, সরকারের দেওয়া অন্যান্য সার্টিফিকেট তারা এতগুলো বিষয় যদি তারা বাতিল করতে পারে তাহলে আসাম চুক্তিটাকে বাতিল করে দেয় না কেন? আসাম চুক্তি তো আমাদের মতামতে নয়, আমাদের জন্য নয়, আসাম চুক্তি নিয়ে কোনও গণভোট হয়নি। মুষ্টিমেয় কয়েকজন মানুষ যার মধ্যে রয়েছেন প্রফুল্ল কুমার মহন্ত, ভৃগু ফুকন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, আমাদের ভারি শিল্পমন্ত্রী সন্তোষ মোহন দেব এবং আরো কয়েকজন মিলে একটা আইন করে নিল যে আইনের একটি ধারা ১৪(১) primary responsibility of the Government of Assam to protect, maintain and cultivate Assamese culture in the state এটা তো আমাদের জন্য নয়।” তিনি আরো বলেন, “এখানে অসমিয়া সংজ্ঞার মধ্যে বাঙালি আছে, বোরো আছে, হুল আছে, ডিমাসা আছে, মনিপুরি আছে।কিন্তু তা কি কোথাও লেখা আছে? ভারতীয় সংজ্ঞার মধ্যে সব আছে। অসমিয়া সংজ্ঞাটার মধ্যে কেন সেটা পাই না? আমি বিশ্বাস করি বহুত্বের প্রশ্ন এখানে নষ্ট করা হচ্ছে, বহুত্বের সামগ্রিকতা নষ্ট করা হচ্ছে। তাই এসবের প্রতিবাদ হওয়া খুব দরকার।শুধু এন আর সির বিষয়টাই নয়। রবীন্দ্রনাথও গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে। পঁচিশে বৈশাখ বাতিল হয় বা করা উচিৎ? জন্মদিন এবং মৃত্যুদিন দুদিনই পালন করা উচিৎ। এটা দ্বিচারিতা।”

এই ব্যাপারে আমাদের প্রতিনিধির সাথে এক সাক্ষাৎকারে অন্যতম সংগঠক কমল চক্রবর্তী জানালেন যে “এটা কোনো একটা সংগঠন বা কোনো একটা সংস্থার কোন কিছু নয়, এটা সবার জন্য, সবার কর্মসূচি। কেউ যেন মনে না করেন যে এটা নিঃশর্ত নাগরিক মঞ্চের মিছিল, তাই আমাদের প্রচারেও আমরা কোনও সংগঠনের নাম উল্লেখ করছি না । কোন একটা সংগঠনের নাম উল্লেখ করে এটাকে গণ্ডিবদ্ধ করা ঠিক না। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চ, বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, কর্মচারি জেলা পরিষদ, সিআরপিসিসি প্রভৃতি অসংখ্য সংগঠন আছে। তাই নাম উল্লেখ করে পরিসর ছোট করতে চাই না, এটা স্বতঃস্ফূর্ত, আপনিও আছেন।”

নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে তিনি আমাদের জানালেন, “দেখুন, যাদের ভোটার আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে, জব কার্ড দেওয়া হয়েছে, রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে, ইন্দিরা আবাস যোজনার কাগজ আছে, বা কোন ধরনের সরকারি নথি আছে এদেরকে নাগরিকত্ব দিতেই হবে। । খেটে খাওয়া মানুষ যারা সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরে যায়, তাদের কাছে এত পুরনো কোনো নথি বা কাগজ না থাকাটাই স্বাভাবিক, এরা তো এই কাগজগুলোর মানেই জানে না। তাই এদের নাগরিকত্ব যদি কেড়ে নেওয়া হয়, সেটা সভ্য সমাজে চলতে পারে না। এটা আমরা কোনভাবেই মানতে রাজি নই।”

এনআরসি নিয়ে বিক্ষিপ্তভাবে প্রচুর আন্দোলন হচ্ছে, কিন্তু সবগুলো আন্দোলনকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার এই প্রয়াসে জনগণ সাড়া দেবেন, এটাই সচেতন মহল মনে করছেন।

Comments are closed.