Two days long International seminar started at Gurcharan College
গুরুচরণ কলেজের ইংরেজি বিভাগ এবং ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে থাকা কলকাতার মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ট্রেডিশনস অফ কালচারেল প্রোডাকশন ইন নর্থইস্ট ইন্ডিয়া’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার বৃহস্পতিবার থেকে গুরুচরণ কলেজে শুরু হয়েছে। এই সেমিনারে জার্মানি এবং আমেরিকা সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অধ্যাপক ও গবেষকরা অংশ নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার কলেজের প্রেক্ষাগৃহে সেমিনারটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সঞ্জীব ভট্টাচার্য। এতে মুখ্য অতিথি হিসেবে অংশ নেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউট অব এশিয়ান স্টাডিজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক কৈলাস চন্দ্র বড়াল, সঙ্গে ছিলেন বরিষ্ঠ সাংবাদিক জ্যোতি লাল চৌধুরী, গুরুচরণ কলেজের অধ্যক্ষ বিভাস দেব, বিভাগীয় প্রধান পান্থপ্রিয় ধর সহ অন্যান্যরা।
উপস্থিত অতিথিরা প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করেন। আয়োজকদের তরফে পান্থপ্রিয় ধর তার উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, “বরাক উপত্যকায় এ ধরনের সেমিনার এই প্রথম আয়োজন করা হচ্ছে। উত্তর পূর্ব ভারত বরাবরই দেশের মূল অংশের কাছে উপেক্ষিত। ভারতবর্ষের এই অংশটি প্রাকৃতিক দিক দিয়ে যেমন সমৃদ্ধ, সংস্কৃতির দিক দিয়েও তেমনি উন্নত। নমামি ব্রহ্মপুত্র, নমামি বরাক বা জুডিমা ফেস্টিভাল এসবের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বের সমৃদ্ধি এবং উন্নত সংস্কৃতি দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়েছে। সেই ধারাকে মেনে আমরা গুরুচরণ কলেজে এই দুদিনের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছি। এর লক্ষ্যই হচ্ছে, আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের মূলকে স্পর্শ করা এবং তার থেকে যতটুকু সম্ভব খনি উদ্ধার করে এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। বিভিন্নতার মধ্যে একতা ভারতবর্ষের আদর্শ হলেও উত্তর পূর্বেই এর সব থেকে ভালো প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে আমরা পুরোপুরি ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ভাষা হলেও একে অন্যকে গ্রহণ করতে জানি, একে অন্যের সংস্কৃতিকে আপন করে নিই। আমাদের দুদিনের সেমিনারে এই দিকগুলোই তুলে ধরা হচ্ছে। প্রায় ৫০ জন গবেষক নিজেদের পেপারের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিবিধতা, সৌন্দর্য সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরবেন’।
অধ্যাপক কৈলাস চন্দ্র বড়াল তার ভাষণে সংস্কৃতির সঙ্গে মানুষের জীবন কিভাবে জড়িয়ে আছে তার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক এলাকার সংস্কৃতি সেই এলাকার মানুষের জীবনযাপনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। আমরা বিবিধতা নিয়ে এত কথা বলি অথচ একে অন্যকে অজান্তেই গ্রহণ করে নিতে আমাদের অসুবিধা হয় না। তবে সেটা মেনে নেওয়া হচ্ছে আসল কাজ। আজ আসামের গামছা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা বিরোধী দলের কোনো বড় নেতা, সবাইকেই গলায় ঝুলিয়ে থাকতে দেখা যায়। এই গামছা অসমের ঐতিহ্যকে বহন করলেও শুধুমাত্র অসমে যে আজকাল এটি বানানো হয় তা নয়। রসগোল্লা কলকাতার না ওড়িশার তা নিয়ে এখনো দ্বন্দ্ব রয়েছে, তবে দুই সংস্কৃতিতেই রসগোল্লা সমান ভাবে জড়িয়ে আছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে সংস্কৃতি রক্ষার নাম করে মানুষকে ভুলে যাচ্ছি। আমাদের একে অন্যের পাশে আসতে হবে, একে অন্যকে বুঝতে হবে এবং সংস্কৃতি কেন মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয় তা জানতে হবে।
দুদিনের সেমিনারে আমেরিকা থেকে অনুবাদ বিশেষজ্ঞ জন ভাটের এবং জার্মানি থেকে গবেষক ক্যাথেরিন হুইট অংশ নিচ্ছেন। সেমিনারকে সামনে রেখে সেজে উঠেছে গুরুচরণ কলেজ। অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা এই সেমিনারের আয়োজনে যোগ দিয়েছেন। দুদিনের সেমিনারটি বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রদর্শনী এবং কয়েকটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব মিলিয়ে দু দিনের এই অনুষ্ঠানে উত্তর-পূর্বের নিজস্বতাকে উদযাপন করা হচ্ছে গুরুচরণ কলেজে।
Comments are closed.