
Veteran Journalist and Sports administrator, Pranabananda Das moves to court against Assam Olympic Association
রহস্য থেকে পর্দা উঠল, মামলা করেছেন জিবি সদস্য তথা ক্রীড়া সংগঠক প্রণবানন্দ দাশ, এ ও এর বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানালেন, শিলচরের খেলাধুলার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত
সোমবার জিবি বৈঠকের পর থেকেই শিলচরের ক্রীড়াঙ্গনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। অসম অলম্পিক সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করল কে? সন্ধ্যা থেকে রাত, সর্বত্র এ নিয়ে চর্চা ছিল। মঙ্গলবার সকালে এক সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সেই রহস্য থেকে পর্দা তুললেন ক্রীড়া সংগঠক, শিলচর ডি এস এর জিবি সদস্য তথা বিশিষ্ট সিনিয়র সাংবাদিক প্রণবানন্দ দাশ। আইনজীবী সৌমেন চৌধুরি কে পাশে বসিয়ে জানালেন, এ ও এর বিরুদ্ধে মামলাটি তিনি করেছেন। শিলচরের খেলাধুলার স্বার্থেই এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন, এটাও সাফ করে দেন তিনি।
প্রণব বাবু বলেন, ‘শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এক ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংস্থা। এর একটা ইতিহাস রয়েছে। এমন সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করে চরম অপমান করেছে এ ও এ। তাই এই অঞ্চলের একজন ক্রীড়া সংগঠক, ক্রীড়াপ্রেমী হিসেবেই আমি আইনি পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিই। সে অনুসারে গতকাল জেলা আদালতে এ ও এর বিরুদ্ধে এক মামলা নথিভুক্ত করি।’ তিনি জানান, শিলচরের খেলাধুলার স্বার্থে এ ও একে আইনিভাবে চ্যালেঞ্জ করাই ছিল একমাত্র বিকল্প। বলেন, ‘এ ও এ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে শিলচর ডি এস এর সদস্যপদ বাতিল করেছে। ময়দানের লোক হিসেবে বিষয়টা আমার কাছে আত্মসম্মানের ব্যাপার মনে হয়েছে। এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে এই অঞ্চলের ক্রীড়াপ্রেমীদের ও চরম অপমান করেছে এ ও এ। শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা রাজ্যের অন্যতম সেরা সংস্থা। রাজ্যের ক্রীড়ায় এর বিরাট অবদান রয়েছে। এই ডি এস এর হাত ধরে অনেক খেলোয়ার উঠে এসেছেন। যারা রাজ্য দলের প্রতিনিধিত্ব করে সুনাম অর্জন করেছেন। রাজ্যের মান বাড়িয়েছেন। এমন একটা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে খুবই অপমানজনক ব্যবহার করেছে এ ও এ। একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ‘
উধারবন্দ টেবিল টেনিস ক্লাবের সচিব প্রণবানন্দ দাশ জানান, সংবিধানের দোহাই দিয়ে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করেছে এ ও এ। অথচ তারাই প্রতিনিয়ত সংবিধানের অবমাননা করেছে। শিলচর ডি এস এ কে টার্গেট করেই সদস্যদের পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে বেআইনিভাবে সংবিধানে সংশোধনী করে নিয়েছে। এওএ-র সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে, সংবিধান সংশোধন করতে হলে বিশেষ সাধারণ সভা বা এসজিএমে করতে হবে। কিন্তু এ ও এ নিজেদের সংবিধান লঙ্ঘন করে ৫ মে বার্ষিক সাধারণ সভা ( এজিএম) সংশোধনী পাস করায়। তিনি বলেন, ‘আসলে পুরো বিষয়টা হচ্ছে, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্ষমতা দখল করতে চাইছে এ ও এ। আমরা তৃনমূল স্তর থেকে কাজ করে সংগঠক হয়েছি। ৩০-৩৫ বছরের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এ ও এর আমাদের কাছ থেকে কাজ শেখা উচিত। এ ও এর বার্ষিক সাধারণ সভায় শিলচরের বিষয়টা আলোচ্যসূচিতে ছিল না। সেদিনের সভায় আলোচ্যসূচিতে মোট ১৫টি বিষয় ছিল। কোথাও কিন্তু শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ব্যাপারটা ছিল না। এত বড় এক সংস্থার অনুমোদন বাতিল হয়ে গেল অথচ বিষয়টা আলোচ্যসূচিতে ছিল না?’
প্রণব বাবু আরো বলেন, ‘অসম অলিম্পিক সংস্থার কর্তারা সম্ভবত নিজেদের সংবিধানই জানেন না। জানলে এমন টা করতেন না। কারণ এ ও এর সংবিধান বলছে বার্ষিক সাধারন সভা ডাকতে হলে ২১ দিনের নোটিশ দিতে হয়। তবে এ ও এ ১৮ দিনের নোটিশ দিয়ে সভা ডেকে নিল? গত ১৮ এপ্রিল সদস্য সংস্থাদের এজিএমের নোটিশ পাঠিয়ে ছিল এ ও এ। আর সভা অনুষ্ঠিত হয় ৫ মে। অর্থাৎ নোটিশ জারি করার ১৮ দিনের মাথায় এ জি এম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যারা নিজেদের সংবিধানের অবমাননা করে তারাই আবার শিলচরকে সংবিধান নিয়ে কথা বলছে?’
এ ও একে এক হাত নিয়ে আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী বলেন, ‘১০১২০২২ কেস নম্বরে অসম অলিম্পিক সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। এতে জড়ানো হয়েছে ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা কেও। তবে আমরা ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার কাছ থেকে কোনো রিলিফ চাইছি না। এ ও এ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করেছে।’ সৌমেন বাবু জানান, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সার্বভৌমত্ব যাতে ক্ষুন্ন না হয় এবং এ ও এর সংবিধান সংশোধনী কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘শুধু দুটি ক্ষেত্রেই অসম অলম্পিক সংস্থা তার যে কোনো সদস্য সংস্থার অনুমোদন বাতিল করতে পারে। এক, যদি কোনো সদস্য নিয়মিতভাবে এ ও এর খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ না করে। এবং দুই, যদি কোনো সদস্য এ ও এর বার্ষিক ফি জমা না করে। এই দুটি কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই কোনো সদস্যের অনুমোদন বাতিল করতে পারে না এ ও এ।’
এখানেই না থেমে সৌমেন বাবু আরো বলেন, ‘সদস্য পদ বাতিল করার পর যেভাবে এ ও এ তিন সদস্যের এক কমিটি গঠন করে দিয়েছে তা হাস্যকর। ওরা নিজেদের ভাবছেটা কি? ঘরে বসেই একটা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্যপদ বাতিল করে দেবে? বিষয়টা এত সোজা নাকি? ওরা শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আসলে বদলা নেওয়ার মানসিকতার জন্যই এমন বেআইনি কাজ করেছে অসম অলিম্পিক সংস্থা।’
এ ও এর বিরুদ্ধে মামলা করার পর প্রণবানন্দ দাশের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তিনিই কেন? এর জবাবটাও দিলেন শিলচরের এই পোড়খাওয়া সংগঠক। বললেন, ‘এর সরাসরি উত্তর আমার কাছে নেই। তবে অসম অলম্পিক সংস্থা বনাম শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার এই ইস্যুর প্রথমদিন থেকেই আমি জড়িত ছিলাম। একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে ছিলাম। ঝামেলাটা যাতে মিটে যায় তার জন্য ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ওরা সংবিধান সংশোধন করে বার্ষিক সাধারন সভা আয়োজনের শর্ত দিয়েছিল। আমিও ওদের দুটি শর্ত দিয়েছিলাম।’ প্রণব বাবু বলেন, ‘শিলচর ডি এস এ কিন্তু প্রথম দিন থেকেই বিষয়টাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিল। এ ও এ যখনই কোনো চিঠি দিয়েছে, শিলচর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সেই চিঠির জবাব পাঠিয়েছে। তবে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে যতগুলো চিঠি পাঠানো হয়েছিল, তার মধ্যে একটিরও জবাব আজ পর্যন্ত পাঠায়নি এ ও এ।’
এওএ যে সব নিয়ম-নীতিকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে সংবিধান সংশোধনী করিয়েছে, তার ব্যাখ্যাও তুলে ধরেন প্রণব বাবু। বলেন, ‘একটা পাড়ার ছোট ক্লাব ও এভাবে তার সংবিধান সংশোধনী করে না। নিয়ম হচ্ছে কোনো সংস্থার সংবিধানের সংশোধনী আনতে হলে সে সম্পর্কে চিঠি দিয়ে প্রত্যেক সদস্যকে জানাতে হয়। তবে এ ও এ এমনটা করেনি। এ জি এমের দিন সংবিধানে সংশোধনী এনে সেদিনই আবার সেই সংশোধনী পাস করানো হয়। সংবিধান নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করেছে এ ওএ। আবার তারাই কিনা শিলচর ডি এস এ কে সংবিধান নিয়ে জ্ঞান দিচ্ছে? সংবিধান নিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকার নেই এ ও এর।’
এ ও একে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে টি টি ক্লাবের সচিব বলেন, ‘শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা এওএর অধীনস্থ কর্মচারী নয়। এটা এবার বুঝে নিতে হবে। শিলচর কে প্রতিনিয়ত অপমান করেছে এ ওএ। অবৈধ বলেছে। অথচ ডি এস এ কিন্তু এ ওএর প্রত্যেকটি চিঠির জবাব দিয়েছে। তাদের যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে।’ প্রণব বাবু বলেন, ‘হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, যে কমিটিকে ওরা অবৈধ বলছে সেই কমিটির দু’জন তাদের সভায় শিলচরের প্রতিনিধিত্ব করল। এটা কি করে সম্ভব? তাহলে তো এ ও এর সেদিনের বার্ষিক সাধারন সভা ও অবৈধ ছিল। আসলে ওরা চাইছে এই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে একটা পুতুল কমিটি গঠন। যে কমিটি তাদের নির্দেশ অনুসারে কাজ করবে। এই অঞ্চলের খেলাধুলাকে শেষ করে দিতে চাইছে এ ও এ।’
অসম অলিম্পিক সংস্থার বার্ষিক সাধারণ সভায় শিলচরের অনুমোদন বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি ডিএসএর প্রতিনিধিরা। উজান আসামের কয়েকজন সদস্য এর মৃদু প্রতিবাদ করেছিলেন। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের ধন্যবাদ জানান প্রণবানন্দ দাশ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, এ ও একে তার বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য তুলোধুনা করলেও একটি বারের জন্য কিন্তু সচিব লক্ষ্য কোওরের নাম উল্লেখ করেননি প্রণব বাবু। এমনকি যাকে ঘিরে এই বিতর্কে সূত্রপাত, সেই সুবিমল ধর সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলেও তার নাম উল্লেখ করতে চাননি তিনি। শুধু বললেন, ‘এটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিবেকের বিষয়। তার বিবেক থাকলে কিছু একটা করবেন। না থাকলে নয়।’
প্রণব বাবুর এই সাংবাদিক বৈঠকের পর আর কোনো রহস্যই অবশ্য রইল না। এবার মহামান্য আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হবে। চলবে আইনি লড়াই।
Comments are closed.