বীথিকা আচার্য। বরাক উপত্যকার বিশিষ্ট তথা প্রথম মহিলা আইনজীবী। একে চন্দ ল কলেজের প্রথম মহিলা লেকচারার। বর্তমানে ‘ডিস্ট্রিক্ট লেভেল কমিটি ফর ক্রাইমস ইনভলভিং ওম্যান’ এর চেয়ারপারসন। তাছাড়া “প্রটেকশন অফ চিল্ড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস” এর স্পেশিয়াল পাবলিক প্রসিকিউটর। এমন অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন আইনজীবী আচার্য। পুরুষদের ভিড়ে পায়ের নিচের মাটি শক্ত করে শিলচরে আইনজীবী হিসেবে শুধু নিজের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সুনির্দিষ্ট করাই নয়, অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে আইন সংক্রান্ত বিষয়ে মেয়েদেরকে পথ দেখিয়েছেন। তাই এবারের সাক্ষাৎকারে বিশেষভাবে নারী প্রসঙ্গই উঠে এসেছে।
বরাক উপত্যকায় মেয়েদের সামাজিক অবস্থানটা কি রকম? মেয়েরা আইন সম্পর্কে কতটা সচেতন?
অতীতের সঙ্গে তুলনায় বলতে পারি, বরাক উপত্যকায় এক্ষেত্রে সামাজিক অবস্থানের উন্নতি হচ্ছে। বর্তমানে বরাক উপত্যকার মেয়েরাও কিন্তু বেরিয়ে আসছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি ইতিবাচক দিক। তবে বিভিন্ন আইন সম্পর্কে মেয়েদের সচেতনতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যখন নিজের সামনে কোন বিপত্তি আসে বা কোনভাবে আইনের সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তখনই ওরা ওই বিষয় সংক্রান্ত আইনের কথা কিংবা আইনের মারপ্যাঁচগুলো জানতে চায়। এত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক সময় ওরা সাধারণ আইনটুকুও জানে না। এক্ষেত্রে শিক্ষিত-অশিক্ষিত দুয়েরই অবস্থা প্রায় এক। তবুও বলতেই হয়, শিক্ষার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা মহিলারা কিন্তু আইন সম্পর্কে কিছুটা হলেও সচেতন তথাকথিত শিক্ষিত মহিলাদের তুলনায়।
অথচ অত্যাচারের মাত্রা এখন ভীষণভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। শিশু কন্যা থেকে শুরু করে মহিলা পর্যন্ত। বিশেষভাবে শিশু কন্যারা সাংঘাতিক ভাবে অত্যাচারিত হচ্ছে। শিশুদের নির্যাতন সংক্রান্ত অগুনতি কেস রয়েছে বরাক উপত্যকায়। আশ্চর্য হলেও সত্যি, এই শিশু কন্যারা নিকট আত্মীয় এমনকি নিজের ঘরেও নির্যাতিত হচ্ছে। শিক্ষক কিংবা বাইরের জগতের পুরুষতো বটেই এমনকি কখনো নিজের বাবারও এ ধরনের কেসে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা রয়েছে।
আইনগত দিক দিয়ে গ্রামের মেয়েদেরকে সচেতন করার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে? এবারে তা জানতে চাইব
শহর থেকে গ্রামে এ ধরনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান বেশি হয়ে থাকে। আর আমি আরও একটা জিনিস খেয়াল করেছি, গ্রামের মেয়েরা আইনগত দিকটা বেশি জানতে চায়। সব কিছু বিশদভাবে না জানলেও ওদের এতটুকু জানা আছে কোন্ ধারায় কোন্ আইন রয়েছে এবং কিভাবে সেটি ওদের সাহায্যে আসতে পারে। অথচ শহরের মেয়েরা এগুলো থেকে একটু দূরে থাকতেই ভালোবাসে। ওরা জানতেও চায় না ব্যাপারটা আর ওদের মনোভাবটা এমন, এগুলো আমাদের জন্য নয়। কোনোদিন এ ধরনের অসুবিধের মুখে পড়তে হবে না। কিংবা এগুলো নিয়ে জানতে চাইতে লজ্জা পায়। পাছে না কেউ ভাবে ওরা নিজেরাই ভিকটিম।
বিশ্বজুড়েই দেখছি মি টু: নিয়ে অনেক কেস বেরিয়ে আসছে । কিন্তু শিলচরে এ ধরনের কোনও কেস নেই। তুমি কি মনে কর এরকম ঘটনা শিলচরে নেই, না মেয়েরা ভয়ে কথা বলতে পারছে না?
মি টু আন্দোলনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সমাজের অনেক উপরের স্তরের মহিলারা এবং তারা অনেক আগে থেকেই অত্যাচারের শিকার। এত বছর পরে এগুলো সামনে উঠে আসছে। এই যেমন গত বৎসর অস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রীরা কালো কাপড় পড়ে এসে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন মি টু’র সমর্থনে। তাদের এই প্রকাশ দেখে অনেকেই সাহস যুগিয়েছেন নিজেদের কথা বলার।
শিলচরে এমন কেস বেরিয়ে আসেনি বলে এটা মোটেই বলা যায় না, এ ধরনের ঘটনা শিলচরে ঘটছে না। বরং বলা উচিত অহরহ ঘটছে। অনেকে সরাসরি না বললেও প্রায়সই তাদের সঙ্গে সংঘটিত এধরনের ঘটনার কোন না কোন ভাবে উল্লেখ করে থাকেন। হয়তো বা তারা পদ্ধতির মাধ্যমে এগুলোর প্রকাশ করছেন না।
কেন করছেন না? এর পেছনে কি ওদের ভয়ই কারণ?
শিলচর খুব ছোট জায়গা তো, আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যদি কোন মেয়ে এ ধরনের ঘটনার কথা প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন, তাহলে সবাই মেয়েটির দিকেই আঙুল তুলবে, কটাক্ষপাত করবে। তাই এগুলো থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতেই মেয়েরা মুখ খুলছে না। নিজের মা বাবা ভাই বোন পাড়া প্রতিবেশির কথা চিন্তা করেই ওরা এই সাহসী পদক্ষেপটুকু নিতে পারছে না। তবে প্রচুর সংখ্যক মেয়েরা নির্যাতিত হচ্ছে। তাই আমার আশা, অদূর ভবিষ্যতে মেয়েরা মুখ খুলবে। তাছাড়া মি টু’র মত পদ্ধতিগতভাবে না হলেও অনেকেই শিলচরের অনেক বড় বড় ব্যক্তির বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন। এখন তো মি টু’র একটা ওয়েভ এসেছে, কিন্তু আমরা সব সময় দেখি এ ধরনের ঘটনায় বেশিরভাগ সময় মেয়েদের দিকে আঙ্গুল তোলা হয়। এত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যারা অপরাধের শিকার হয় তাদেরকেই মানুষ ঘৃণা করে। অথচ যার দ্বারা এই ঘৃণ্য কাজটি সম্পন্ন হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ততটা সোচ্চার হয় না সবাই। তাই নিজের পায়ের নিচের মাটি হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ করে না মেয়েরা। ব্যতিক্রমও আছে। যতদূর মনে পড়ছে, ১৯৯৮- ৯৯ সালে বদরপুরে একটি মহিলা লোকআদালত হয়েছিল। এটা একবারই হয়েছিল। তাতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিও এসেছিলেন। সেই সময় ওই লোকআদালতে শিলচরের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল। একটি মেয়ে উনার কাছে চাকরির জন্য গেলে ওই মেয়েটির শ্লীলতাহানি হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। আর সেই খবরটা ওই সময়ের সোনার কাছাড়ে হেডলাইন হয়ে এসেছিল। সেই মেয়েটি ছিল একটি বাগানের। অথচ এত বছর আগেও মেয়েটি সাহস করে ঘটনাটা প্রকাশ করেছিল।
এখানে সমান্তরালভাবে আমার আরও একটি প্রশ্ন রয়েছে। মি টু’ র আওতায় এই যে অনেক বড় বড় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে, সেটাও কি উদ্দেশ্য প্রনোদিত হতে পারে না? বলা যায় কি অনেক মেয়েরা মি টু’র সুযোগ নিচ্ছে?
আইন আসলেতো আমাদের রক্ষার্থে রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ এর সৎ ব্যবহার করে আবার সুযোগ নিয়ে অনেকে অপব্যবহারও করে। বলা যায়, মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা রয়েছে। আর মেয়েরাও তো মানুষ। তবে আমি মনে করি এ ধরনের ঘটনা খুবই নগণ্য। বরং বলতে পারি নিজের উপরে অত্যাচারের পরিমাণ কতটা হলে সমাজের সামনে একটা মেয়ে মুখ খুলতে পারে।তাই এ সম্ভাবনা কমই রয়েছে।
শিলচর তথা বরাক উপত্যকায় মেয়েরা কতটা নিরাপদ? তোমাকে যদি নম্বর দিতে বলি,তাহলে তুমি কত দেবে এক্ষেত্রে?
এক্ষেত্রে আমি বলব, শুধু প্রশাসন কিংবা আইন কিন্তু নারীর নিরাপত্তা প্রদান করতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন নারী মানসিকভাবে এসবের মোকাবিলার জন্য শক্তি অর্জন করতে পারছে না। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া সবচাইতে বড় প্রয়োজন। আমার ধারণা, বরাক উপত্যকার মেয়েরা অনেকটাই সাহস সঞ্চয় করে এক্ষেত্রে নিজেদের মানসিক ভাবে তৈরি করে তুলছে। রেংকিং করতে গেলে বলবো ৩ শতাংশ।
তবে আমি আবারও বলব, নিরাপত্তার ব্যাপারটা কিন্তু নিজের কাছ থেকে আসতে হবে প্রথমে। এ ক্ষেত্রে মেয়েদেরকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। নিজেরা অত্যাচারিত হওয়ার পরও যদি ব্যাপারটা লজ্জা কিংবা ভয়ে লুকিয়ে ফেলা হয়, প্রয়োজনীয় এফআইআর টাও করা না হয়, তাহলে প্রশাসন কিভাবে সাহায্য করতে পারবে?
কিছুদিন আগে শিলচরের একটা ঘটনা, রাস্তায় দুটো মেয়েকে শ্লীলতাহানির ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়। তারা যখন নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনেও এর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে যায় তখন পুলিশের সাহায্যের বদলে মেলে অপমান। এই ঘটনায় কি বলতে চাইবে?
তাহলে প্রশ্ন উঠা উচিত আমরা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতাটা পালন করতে পারছি? রাস্তায় যদি কোন ঘটনা ঘটে, তাহলে প্রতিরোধটা আসতে হবে নিজেদের কাছ থেকে এবং অবশ্যই আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে।ওরা কোথায় ছিল? আর পুলিশের ঘটনার ব্যাপারে বলবো, রক্ষক কখনো কখনো ভক্ষক হয়, সে তো অনেক পুরনো কথা। এ নিয়েতো বিরাট কেসও আছে। অসহায় মেয়েটি যখন থানায় গিয়ে সাহায্য চাইল, তখন সাহায্যের পরিবর্তে রক্ষক ভক্ষক হয়ে উঠলো এবং মেয়েটিকে থানায় ধর্ষণ করা হলো। কিন্তু আমি বলব এ ঘটনাগুলো ব্যতিক্রমী। সাধারণ নয়।
নারীর অধিকার কিংবা আইন সম্পর্কে সচেতনতার ক্ষেত্রে গ্রাম আর শহরের অবস্থান কি এক?
গ্রামে এ ধরনের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান খুবই হয়ে থাকে। প্রশাসনিক স্তরে এবং আরো বিভিন্নভাবে প্রচুর সংখ্যক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে আইনের বিভিন্ন দিক বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিভাবে নিজেদের রক্ষার্থে আইন গুলো কাজে লাগানো যায় সেগুলো বিস্তারিত ভাবে বলা হচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এক্ষেত্রেও উপস্থিতির সংখ্যা খুবই কম থাকে। তাই আগেও যা বলছিলাম আবারো বলছি, নিজেদের ওপর যতক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে না ততক্ষণ পর্যন্ত এগুলো নিয়ে কেউ ভাবেন না। তবে সঙ্গে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, শহরের মানুষের চাইতে গ্রামের মানুষ এ ক্ষেত্রে সচেতন বেশি। যেমন ধরো, ৪৯৮ ধারা, সে সম্পর্কে কিন্তু গ্রামের সব মানুষরাই কিছু না কিছু জানেন যে এ ধরনের একটা সেকশন রয়েছে এবং এর মাধ্যমে অত্যাচার হলে থানায় গিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে কিংবা কোর্টে কেস করতে পারে। অথচ বেশিরভাগ শহরের মানুষ এই আইন সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল নন। তারপর যেমন কর্মক্ষেত্রে যে সেক্সুয়াল হারাসমেন্ট হয় সেটারও প্রতিবাদ করতে কর্মরতা শহুরে শিক্ষিতা মহিলারা খুব লজ্জা বোধ করেন। অথচ গত বৎসর এ ধরনের একটি কেসে শিলচরের স্বাস্থ্য বিভাগের একজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। মেয়েটি নিজের থেকে প্রতিবাদ করার সাহস যুগিয়েছিল বলেই এ ধরনের শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এখনও মেয়েরা প্রতিবাদী হয়ে এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সংখ্যা খুবই কম। আসলে বিপরীত সমালোচনা মেয়েরা ভয় করে। এ ধরনের সমালোচনা মেয়েদেরকে এগিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করে দেয়। সমালোচনার ভয়ে মেয়েরা মুখ খোলে না। অনেক সময় এমনও দেখা যায়,কেস চলা অবস্থায় মেয়েরা নিজেদের সুর পাল্টে ফেলে। এফ আই আর করার পরও কেস চলাকালীন সুর পাল্টে বিপরীত কথাও বলতে শোনা যায় সেই অভিযোগকারীর কন্ঠে, কারণ হয়তো বা বাড়ি কিংবা আশেপাশের সবার কাছ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়। ফলে লজ্জা ভয়ে মেয়েরা নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখে। স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে কর্মজীবন পর্যন্ত মেয়েরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়। এমন কি নিজেদের ঘরে নির্যাতিতা হওয়া মেয়ের সংখ্যা ভারতবর্ষে নেহাত কম নয়।
মানে নারীরা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে এখনও ততটা সচেতন নয়? কিন্তু তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির যে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বা হয়েছে,তা কি যথেষ্ট?
মোটেই নয়। অধিকারের কথা তাদেরকে জানানো হয়েছে কিন্তু অধিকার প্রয়োগের যে মানসিকতা, সেটাতো ভীষণভাবে বাধাগ্রস্ত। তাই অধিকারবোধ থাকলেও সেটার প্রয়োগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। যদি এরকম হত তাহলে মেয়েরা সব জায়গায় প্রতিবাদে সোচ্চার হত। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরা এগুলো ঘটনা এড়িয়ে যায়। বলা যায় তারা অবস্থার শিকার।
মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর দায়িত্বটা কার?
আমার মতে, এ দায়িত্বটা সবচেয়ে প্রথমে ঘরের মানুষের উপরই বর্তায়। প্রতিবাদ করার মানসিকতাটা পরিবারের ভেতরে জন্ম নেওয়া উচিত।
তবে আজকাল একটা জিনিস খুব ভালো লাগে, মেয়েরা এসব ক্ষেত্রে প্রশাসনের সাহায্য নিচ্ছে। তাছাড়া আগের তুলনায় ওদের মধ্যে সাহসের মাত্রা বাড়ছে। এ ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার প্রবণতা এসেছে। কিন্তু এই প্রবণতাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সার্বিক পরিস্থিতি ও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। যারা এসব ক্ষেত্রে অভিযোগ করছে তাদেরকে যেন ভিন্ন চোখে না দেখা হয়, এটাই আমার অনুরোধ। তাই তোমার প্রশ্নের উত্তরে বলতে পারি, দায়িত্বটা আমাদের সবার। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো খুব জরুরি। দেখা যায়, এক্ষেত্রে সাহস জোগানোর পরিবর্তে ওই মেয়েদের নিয়ে সবাই বিভিন্ন ভাবে কথা বলতে শুরু করে। তাই আমাদের শুধুমাত্র প্রশাসনের ওপর দায়িত্ব চাপালে চলবে না।
আইনগতভাবে শিলচরে মেয়েদের সচেতন করে তোলার কতটা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?
প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন এনজিও, সামাজিক সংস্থা এমন কি আইন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। কিন্তু আমার যেটা মনে হয়, সেটা গ্রহণের জন্য জনগণ ততটা তৈরি নন। তাই জনগণের গ্রহণ করার মানসিকতাও তৈরি করতে হবে। মানুষ ভাবে, আমার উপরে তো আসেনি, প্রতিবেশীর ওপর যাই হোক। এই মানসিকতা যতদিন পর্যন্ত পাল্টাবে না ততদিন পর্যন্ত আইনের সুফল পাওয়া সম্ভব না। প্রচুর আইনগত সুরক্ষা থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের ভাগ্যে সেটা জুটছে না। মেয়েরা সেটাও পাবে যদি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
তোমার কর্ম জীবনে এমন কোন ঘটনার কথা কি এই মুহুর্তে তোমার মনে পড়ছে, যা তোমাকে অবাক করে দিয়েছিল?
অনেক সময় অনেকে আমাকে চিঠি লেখে। কিন্তু একবার প্রচণ্ড নামকরা শিলচরের একজন বড় মাপের ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে একজন ব্যক্তি নিজের নাম প্রকাশ না করে আমাকে চিঠি দিয়েছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন মেয়েদের জীবন কিভাবে নষ্ট করেছিলেন তার বিবরণ তুলে ধরে লেখা ছিল চিঠিটা। চিঠিটা পড়ে অবাক হয়ে গেছিলাম, যার কাছে প্রচুর সংখ্যক কম বয়সী মেয়েদের যেতে হয়, সেই নামিদামি ব্যক্তি সেই সুযোগটা গ্রহণ করে এমনতর কাজ করতে পারে! অথচ নাম প্রকাশ করে সামনে থেকে এসে কেউ অভিযোগ না করলে প্রশাসনেরও কিছু করার থাকে না। তাই সেই ব্যক্তির শাস্তির জন্য কিছু করা সম্ভব হয়নি।
একজন আইনজীবী হিসেবে তুমি কোন মেসেজ দিতে চাইবে?
আমি শুধু বলতে চাই, মেয়েদের আরো বেশি করে সাহসিকতা দেখাতে হবে। নিজেদের উপর অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য না করে যথাস্থানে সঠিকভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। একজনের মুখ বন্ধ করে থাকার ফলে আরও দশ জনের ক্ষতি হয়ে যাবে।তাই মেয়েদের আরও বেশি সাহসী হয়ে উঠতে হবে।
Comments are closed.