ক্রমশ বাড়ছে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর সংখ্যা, রবিবার মারা গেলেন ৮ জন
প্রতিদিনের পরিসংখ্যান বলছে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ কঠিন রূপ নিচ্ছে কাছাড় জেলায়। শনিবার জেলায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬৩০ জন ব্যক্তি, রেপিড এন্টিজেন টেস্টে ৪৭২ এবং আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ১৯৮ জনের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এই সংখ্যা প্রায় কামরূপ মেট্রোর প্রতিদিনের সংখ্যার কাছাকাছি। রবিবার এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে আক্রান্তের সংখ্যা জানানো হয়নি। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গত ২৪ ঘন্টায় ভাইরাসে আক্রান্ত ৮ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। ৬ জন কাছাড় জেলার এবং একজন করে হাইলাকান্দি ও করিমগঞ্জের। শনিবারও কাছাড় জেলায় ৬ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারি অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত জানিয়েছেন, হাসপাতালের রবিবার ২৬৮ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৯২ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ১৭৬ জন। ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ২৭ জন আক্রান্ত ব্যক্তি এবং ১৭৬ জনের চিকিৎসা অক্সিজেনের সাহায্যে করা হচ্ছে। এদিন নতুন ৫২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং ৩৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ৪৪ জনকে চিকিৎসকের পরামর্শে হোম আইসোলেশনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের পরীক্ষায় রেপিড এন্টিজেন টেস্টে ৫৬ জন এবং আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ৩৫ জন রোগীর শরীরে সংক্রমণ পাওয়া গেছে।
গত ২৪ ঘন্টায় যে ৮ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে তারা হলেন, শরিফা খাতুন বরভুইয়া, মিন্টু দেব, নীরদ রায়, মহেন্দ্র সিংহ, মুকুল মন্ডল, প্রদীপ মুরা, মঙ্গল দাস এবং প্রীতি দেব।
শরিফা খানম বরভুইয়া কাছাড় জেলার ডুবাগ এলাকার বাসিন্দা, তিনি ১৭ মে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন, শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
মিন্টু দেব তারাপুর সেকেন্ড গেট এলাকার বাসিন্দা, ২০ মে তিনি হাসপাতালে আসেন এবং রবিবার সকালে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।
হাইলাকান্দি জেলার হরিশ নগর এলাকার বাসিন্দা নীরোদ রায় ২০ মে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। রবিবার সকাল ৭টা ১০মিনিটে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
শিলচর শহরের তারাপুর এলাকার বাসিন্দা মহেন্দ্র সিংহ ৫৬ বছর বয়সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি শনিবার হাসপাতলে ভর্তি হয়েছিলেন এবং এদিন শেষরাতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
রংপুর মজুমদার লেনের বাসিন্দা মুকুল মন্ডল করোনা ভাইরাস সহ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে ২০ মে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। রবিবার বিকেল পাঁচটায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর।
কাছাড় জেলার কুম্ভা চা বাগান এলাকার বাসিন্দা প্রদীপ মোরা ৪৫ বছর বয়সে করোনাভাইরাসের শিকার হয়েছেন। তিনি শনিবার মাঝরাতে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রাণ হারিয়েছেন।
তারাপুর এলাকার মঙ্গল দাস ১৮ মে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানেই জানা যায় তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে। একসময় আইসিইউ ওয়ার্ডে ভেন্টিলেশনে তাকে রাখা হয়েছিল। রবিবার সকালে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
করিমগঞ্জ জেলার নিভিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রীতি দেব ১৭ মে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন এবং শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে এবং ভেন্টিলেশনে অক্সিজেনের সাহায্যে তাকে রাখা হয়। তবু শেষ রক্ষা হয়নি।
দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর থেকে কাছাড় জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪৫৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৪১৫৮ জন ব্যক্তি। বর্তমানে জেলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২২৪৮ জন।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নতুন ১৮০টি অক্সিজেনযুক্ত শয্যা এবং ৪০টি আইসিইউ গড়ে তোলার কাজ শীঘ্রই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তারা জনগণের উদ্দেশ্যে একটি অনুরোধ রেখেছেন, কেউ যাতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে থাকার জন্য আবেদন না করেন।
Comments are closed.