Also read in

ডাঃ রাজীব বিশ্বাস রনধীর পালকে মানসিকভাবে নির্যাতন করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন, অভিযোগ পরিবারের

শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের নতুন ইনচার্জ ডাঃ রাজীব বিশ্বাস বিভাগের কর্মচারী রনধীর পালকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে রণধীর পাল বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, এমনটাই অভিযোগ রণধীর পালের কন্যা পূজা পাল এবং স্ত্রী সুপ্রিয়া পালের। তারা ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৪, ৩৫২ এবং ১১৬ ধারায় ডক্টর রাজীব বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পাশাপাশি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এব্যাপারে সুবিচারের আবেদন জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার কাঁঠাল রোডে নিজেদের বাসভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে রনধীর পালের পরিবারের সদস্যরা তাদের অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। পূজা পাল বলেন, আমার বাবা শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কে প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করে আসছেন। সাধারণ মানুষের সেবায় তিনি নিজেকে এতটাই নিযুক্ত করেছিলেন যে ব্লাড ব্যাঙ্কেই তাকে থাকতে হতো। কেননা ২৪ ঘন্টা তার কাছে দুঃস্থ পরিবারের মানুষের ফোন আসতো এবং তিনিও তাদের কখনো ফিরিয়ে দিতেননা। তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো দুর্নীতির অভিযোগ উঠেনি অথচ ব্লাড ব্যাঙ্কে নতুন ইনচার্জ রাজীব বিশ্বাস এসেই তার সঙ্গে নানান ভাবে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। তিনি প্রায়ই আমাদের বলতেন রাজিব বিশ্বাস তাকে অনেক খারাপ কথা শুনিয়েছেন তবে নিজের বিভাগের ঊর্ধ্বতন আধিকারিক এমনটা করে থাকেন বলে নিজেকে গুছিয়ে রাখতেন।

প্রায় এক মাস ধরে মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করার পর গত শনিবার সন্ধ্যায় বাড়ি এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আমরা কারণ জানতে চাইলে বলেন আজ সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে আজ আমাকে এত বাজে কথা শোনানো হয়েছে যে আমি আর কাজ করতে পারছি না। তার কিছুক্ষণ পরই বিষাক্ত কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। আমরা তাকে হঠাৎ করে যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখি এবং তিনি বমি করতে থাকেন। তাকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে জানা যায় তিনি বিষাক্ত কিছু খেয়েছেন। এখনো তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। অসুস্থ অবস্থায় তাকে দেখতে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বাবুল বেজবরুয়া সহ প্রত্যেক বিভাগের কর্মচারিরা এসেছেন। তবে একমাত্র আসেননি তারই বিভাগের ইনচার্জ ডাঃ রাজীব বিশ্বাস। এর পিছনে কি কারণ তা আমার কাছে স্পষ্ট, তিনি বুঝে গেছেন তার ভুলেই কাজটি হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করেছি পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এব্যাপারে সুবিচার চাইছি। একটা মানুষ শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ককে এতটা উচ্চতায় নিয়ে গেছেন এবং জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করেছেন যে আজ থেলাসেমিয়া শিশু থেকে শুরু করে ক্যান্সার রোগী সবাই এক কথায় রনধীর পালকে চেনে এবং বিশ্বাস করে। হয়তো তার এই সুনাম রাজীব বিশ্বাস সহ্য করতে পারেননি। আমার বাবাকে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়ার পাশাপাশি রাজীব বিশ্বাস বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আমার বাবার সম্বন্ধে অনেক অশালীন মন্তব্য করেছেন। আমরা এসব মুখ বুজে সহ্য করে নিতাম যদি বাবার এই অবস্থা হতো না। একটা মানুষ কতটুকু যন্ত্রণা সহ্য করে বিষ খেতে উদ্যোগী হয় সেটা সভ্য মানুষকে বুঝিয়ে দিতে হয়না। তবে আমরা এবার চুপ থাকবো না। আমরা আইনের দ্বারস্থ হয়েছি এবং বাবার বিরুদ্ধে যে সব চক্রান্ত হয়েছে তা খুঁজে বের করব।

বরাক ভ্যালি ভোলান্টারি ব্লাড ডোনার্স ফোরামের মুখ্য উপদেষ্টা মহিতোষ পালও এদিন রনধীর পালের পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ান। তিনি জোর গলায় বলেন, গত ১৭ বছর ধরে বরাক উপত্যকায় আমরা রক্তদান আন্দোলন নিয়ে কাজ করছি। শিলচর মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্ক আমাদের কাছে সবথেকে ভরসার জায়গা। এর অন্যতম কারণ হচ্ছেন রনধীর পাল। তিনি আমাদের পাশে সব সময় ছিলেন। কত ইউনিট রক্ত উনি আমাদের কথায় ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু কোন দিন টাকা-পয়সা চাওয়া তো দূর, এক কাপ চা পর্যন্ত খেতে চাননি। বিভাগে আভ্যন্তরীণ ভাবে কি হয়েছে সেটা তদন্তসাপেক্ষ। তবে তদন্ত না করে একজন ইনচার্জ তার কর্মচারির সঙ্গে এভাবে দুর্ব্যবহার করবেন এটা মেনে নেওয়া যায়না। যদি তদন্তে রনধীর পাল দোষী সাব্যস্ত হন তাকে সরকারি নিয়মে শাস্তি দেওয়া হবে। তবে এভাবে মানসিক যন্ত্রণা দিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া অমানবিক।

শিলচর মেডিক্যাল কলেজে ব্লাড ব্যাঙ্কে দুর্নীতি রুখতে গত শনিবার সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। কাকতালীয়ভাবে ওইদিনই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী রনধীর পাল। এই দুই ঘটনায় কতটুকু সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। তবে সম্প্রতি রনধীর পালের বিরুদ্ধে কিছু কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয় কর্তৃপক্ষের তরফে। যদিও রনধীর পালের পরিবারের সদস্যরা এব্যাপারে বিশেষ কোন কথা বলতে চাইছেন না, তবে তার ওপর মানসিকভাবে হেনস্থা হয়েছে বলে পরিবারের একাংশের অভিযোগ।রনধীর পাল বর্তমানে মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগে চিকিৎসারত। তার সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী, বড় ভাই সহ পরিবারের বেশকিছু সদস্য।

অধ্যক্ষ বাবুল বেজবরুয়া এব্যাপারে বলেন, আমরা সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি কারো সঙ্গে কোন নিজস্ব শত্রুতা মেটানো হয়নি। আমাদের একজন কর্মী বিষাক্ত কিছু খাওয়ার ফলে মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছে এবং তাকে সুস্থ করে তুলতে আমরা পুরোপুরি ভাবে চেষ্টা করছি। হাসপাতালে প্রত্যেক কর্মীর সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের এবং তাদের পাশে থাকার পুরোপুরি চেষ্টা আমরা করি। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মচারিটি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন কিনা এটা পরিষ্কার নয় এবং এসব তদন্তসাপেক্ষ। ব্লাড ব্যাংকের ভিতরে এবং চারপাশে বেশ কিছু দুর্নীতি চলছে বলে আমি প্রথম থেকেই শুনে এসেছি। অনেকে অনেক সময় আমার কাছে এসে কথাগুলো তুলে ধরেছেন, তবে সেগুলো পর্যাপ্ত ছিলনা। এবার আমরা সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে এর বাইরেও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে তাই আমি আসাম স্টেট এইডস্ কন্ট্রোল সোসাইটির কাছে তদন্তের জন্য আবেদন জানিয়েছি । তারা সারা রাজ্যের প্রত্যেকটি ব্লাড ব্যাঙ্কের উপর নজর রাখেন, তাদের নিরপেক্ষ তদন্তের ফলে আসল তথ্য উঠে আসবে। তাদের তদন্তের রিপোর্ট এবং নির্দেশিকায় ভবিষ্যতে আমরা নতুন নিয়ম চালু করতে পারব এবং দুর্নীতি মুক্ত ভাবে বিভাগটি চালানো সম্ভব হবে।

Comments are closed.