
শান্তিপূর্ণ বনধ, নেই কোনও গ্রেফতার, জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন
নতুন কৃষক বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ভারত ব্যাপী বনধকে কেন্দ্র করে কাছাড় জেলায় এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল।বনধে কোন ধরনের অশান্তি হয়নি।বনধ সর্মথকরা সাধারণ মানুষের কাছে হাতজোড় করে সমর্থনের দাবি জানিয়েছেন এবং এই বনধে পুলিশ কাউকে গ্রেফতারও করেনি। সাধারণত বনধে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। তবে সরকারের সমর্থনকারী সংগঠনগুলো এই বনধ মানবে না বলে আগে জানিয়ে দিয়েছিল, তাই তারা দোকানপাট খোলা রেখেছিলেন। রিক্সা, অটো, টুকটুক ইত্যাদি পাবলিক যানবাহন চলাফেরা না করলেও অনেকেই নিজেদের গাড়ি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন। একশ্রেণীর মানুষ বনধ না মানলেও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ছিল এবং বলা যায় বনধ প্রায় সফল।
কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন কৃষকরা। সরকারের সঙ্গে একবার বৈঠক হয়েছে তবে তাতে কোনও সমাধান সূত্র বেরিয়ে আসেনি, ফলে মঙ্গলবার ভারত বন্ধের ডাক দেওয়া হয়। এর আগে সোমবার সারাদেশে বনধ সফলের জন্য বিভিন্ন ধরনের মিছিল হয়। এছাড়া বেশকিছু বার্তা জারি করা হয়। তাঁরা স্পষ্ট করে জানিয়েছে কোনও দোকান জোর করে বন্ধ করা যাবে না। এছাড়া কেন্দ্রীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বনধ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্তই হবে। তবে কাছাড় জেলায় বনধ ১২ ঘন্টা পালন করার সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। এর আগে বনধ সমর্থকরা পুলিশসুপার বিএল মিনার সঙ্গে দেখা করেন। পুলিশ সুপার তাদের আবেদন জানান বনধকে কেন্দ্র করে যাতে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিলচর সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় সমর্থনকারী পিকেটাররা খুব শান্তভাবে সাধারণ মানুষকে বনধ সমর্থনের জন্য আবেদন জানান। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন সরকারি কর্মচারিরা কার্যালয়ে যেতে শুরু করেন সেখানেও তারা গেটে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে একই আবেদন রাখেন। অনেকেই তাদের আবেদনে সাড়া দেন আবার অনেকে বলেন সমর্থন রয়েছে কিন্তু বিভাগীয় নির্দেশ উপেক্ষা করা যাবে না। এতে পিকেটাররা বাধা দেননি শান্ত এবং সুশৃঙ্খলভাবে পুরো প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।
সাধারণত বনধের পরিচিত দৃশ্য হচ্ছে, জেলাশাসক কার্যালয় সহ বিভিন্ন এলাকায় পিকেটাররা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং তাদের আটক করে কোন একটা অস্থায়ী কারাগারে দিনভর রেখে দেয় পুলিশ। তবে মঙ্গলবার এই দৃশ্য দেখা যায়নি, যেহেতু সর্মথকরা সুশৃংখলভাবে তাদের প্রতিবাদ প্রদর্শন করেন, পুলিশের তরফেও তাদের আটক করার কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সমর্থনকারীদের তরফে দুলাল মিত্র বলেন, “আমরা আগেই পুলিশের কাছে কথা দিয়েছিলাম আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গ হবে না, কোন অশান্তি হবে না। যারাই এর সমর্থনে এগিয়ে আসবেন তাদের স্বাগত জানানো হবে, যারা আসতে চাইবেন না তাদের জোর করবনা। তারাও আমাদের কোনও পিকেটারদের আটক করেনি, এতে এক অনন্য নজির গঠন হয়েছে। কৃষকদের দাবির সমর্থনে বনধ ডাকা হয়েছিল, তাই সাধারণ মানুষ নিজের ইচ্ছায় এগিয়ে সমর্থন করেছেন। আমরা শিলচর শহর ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকায় আগে প্রচার করেছি এবং জনগণের সাহায্য চেয়েছি। তবে এমনও জায়গা রয়েছে যেখানে আমাদের সর্মথকরা ছিলেন না, কিন্তু সাধারন মানুষ এগিয়ে এসে বনধ সফল করতে সাহায্য করেছেন। এতেই বোঝা যায় মানুষ কৃষকদের পাশে রয়েছেন আর এটাই ভারত বনধের সাফল্য।”
রেল বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বনধের প্রভাব রেল পরিষেবায় পড়েনি। প্রতিবাদকারীরা কোন রেল আটক করেননি, পরিষেবা স্বাভাবিক ছিল।
এদিকে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশের প্রতিবাদকারী কৃষকদের উদ্দেশ্যে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার রাতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়েছেন।
Comments are closed.