করোনায় মারা গেলেন শিলচরের প্রথম লিংক রোডের এক ব্যক্তি, কাছাড়ে আক্রান্ত ৩২ জন
করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে গত বছরের মতোই কঠিন রূপ নিচ্ছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে ধীরে ধীরে সংক্রমনের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও তখন কারও মৃত্যু হয়নি। এবার কিন্তু পরপর মৃত্যুর খবর আসছে। গত মাসে উধারবন্দের দয়াপুর এলাকার এক ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শ পাওয়া গেছিল। শুক্রবার শিলচরের লিংক রোড এলাকার এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এদিন জেলার ৪ জন ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার জেলায় ৭ জন এবং বুধবার ৬ জন ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রথম লিংক রোডের দীপঙ্কর দাস নামের এক ব্যক্তির শুক্রবার করোনা ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স ৫৬ বছর এবং তিনি কিছুদিন আগে কলকাতায় চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। সম্প্রতি তার স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে পরীক্ষায় কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে। শুক্রবার তার মৃত্যু হয়েছে। এবার কোভিড প্রটোকল মেনে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। শিলচর শ্মশানঘাটের একটি চুল্লি এখনও করোনায় মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিদের শেষকৃত্যের জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত কর্মীরা পিপিই কিট লাগিয়ে কাজটি করবেন।
শুক্রবার কাছাড় জেলায় মোট চার ব্যক্তি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন রেপিড এন্টিজেন টেস্টের মাধ্যমে সনাক্ত হয়েছেন এবং এক ব্যক্তির আরটিপিসাআর পরীক্ষা হয়েছে। বর্তমানে কাছাড় জেলায় মোট ৩২ জন ব্যক্তি করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে আছেন। এর মধ্যে ৭ জনের চিকিৎসা চলছে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ২৫ জন বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জেলার প্রথম করোনা সংক্রমণ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মোট ১১,৫৪৫ জন ব্যক্তি পজিটিভ হয়েছেন। এরমধ্যে ১১৪৭৫ জন ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন। সরাসরি করোনার জন্য মৃত্যুর সংখ্যা ৩৮, তবে এর থেকে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে যাদের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছিল কিন্তু সঙ্গে অন্যান্য রোগ ছিল। যদিও তাদের মৃত্যুর জন্য করোনা ভাইরাসকে দায়ী করা হয়নি, তবে শেষকৃত্য সম্পুর্ণ কোভিড প্রটোকল মেনে হয়েছে। জেলায় হোম আইসোলেশনে থেকেছেন মোট ৫৫২৮ ব্যক্তি , এরমধ্যে ৫৫০৩ জন সুস্থ হয়েছেন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য অনুরোধ করলেও অনেকেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসছেন। অনেক লম্বা লাইন ধরে শেষমেষ কাউন্টারে পৌঁছানোর আগেই তাদের বলা হচ্ছে আজ আর ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। অবশ্যই লোক সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একসময় ভ্যাকসিন শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রক্রিয়া প্রায় বন্ধ হয়ে ছিল। ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরেও গতকাল করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন করিমগঞ্জ সিভিল হাসপাতালে সুপার ডাঃ অরুনাভ চৌধুরী।
এদিকে করোনা ভাইরাসের বড়োসড়ো ঢেউ সামলাতে ধীরে ধীরে প্রস্তুত হচ্ছে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১০০টি সাধারণ সজ্জা এবং ৪০ টি আইসিইউ সজ্জা নিয়ে তারা প্রাথমিক স্তরে প্রস্তুত। প্রয়োজনে অন্যান্য বিভাগকেও আবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ ডাঃ বাবুল বেজবরুয়া।
জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি প্রত্যেক ব্যক্তির উদ্দেশ্যে অনুরোধ জানিয়েছেন মাস্ক এবং সেনিটাইজার ব্যবহারের জন্য। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন বিহুর পর সরকার কিছুটা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। সারা রাজ্যেও সংক্রমনের সংখ্যা দ্রুত গতিতে পারছে। বুধবার রাজ্যে মোট ২৫০ জন ব্যক্তি পজিটিভ হয়েছিলেন সেই সংখ্যা বৃহস্পতিবার আড়াইশো ছাড়িয়ে গেছে।
লক্ষ্য করবেন : প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে আজকের কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা ৪ থেকে বেড়ে ৮ ।
Comments are closed.