Also read in

তিনসুকিয়ার বিরুদ্ধে দুরন্ত জয়, নুরুদ্দিন ট্রফি সিনিয়র ক্রিকেটের সেমিফাইনালে শিলচর

দুরন্ত ক্রিকেট উপহার দিয়ে নুরুদ্দিন ট্রফি সিনিয়র আন্তঃজেলা ক্রিকেটের সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল শিলচর। মঙ্গলবার গুয়াহাটির আমিনগাঁও স্টেডিয়ামে শিলচর দল চার উইকেটে হারায় তিনসুকিয়া কে। এই জয়ের সুবাদে গ্রুপ সি থেকে সর্বাধিক ৭ পয়েন্ট নিয়ে শেষ চারের টিকিট আদায় করে নেন প্রীতম দাসরা। এবার সেমিফাইনালে বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে তেজপুর এর মুখোমুখি হবে শিলচর দল।

প্রথম ম্যাচে নগাওয়ের বিরুদ্ধে ড্র করার ফলে তিনসুকিয়া ম্যাচের ওপরই শিলচরের ভাগ্য নির্ভর ছিল। ম্যাচটা তাদের জন্য ভীষণ ভাইটাল ছিল। ‌ এমন একটা লড়াইয়ে দারুন টিম গেম উপহার দিল রাজীব দাসের ছেলেরা। আমিন গাঁও এর স্পিনিং ট্র্যাকে ম্যাচের তৃতীয় তথা অন্তিম দিনে শিলচরের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছিল। সরাসরি জয়ের জন্য ১৬৪ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে সোমবার দ্বিতীয় দিন স্টাম্পসে শিলচরের স্কোর ছিল দু উইকেটে ৩৮। ফিরে গিয়েছিলেন শুভম মণ্ডল ও সমীক দাস। লড়াইয়ে শিলচর দল কিছুটা এগিয়ে থাকলেও তিনসুকিয়ার ধারাবাহিক স্পিন আক্রমণের সামনে তাদের কাজটা কঠিন ছিল।

লো স্কোরিং ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে দেড়শোর বেশি একটা স্কোর তাড়া করা চাট্টিখানি কথা নয়। এরমধ্যে ১০৬ রানে ছয় উইকেট চলে গিয়েছিল শিলচরের। ম্যাচে তখন এগিয়ে তিনসুকিয়া। এমন চাপের মুহূর্তে দুরন্ত ব্যাটিং করলেন রঞ্জি তারকা তথা শিলচরের অধিনায়ক প্রীতম দাস ও জয়দীপ সিং। দুজনেই পরিস্থিতি বিচার করে খেলে গেলেন। বড় শটের দিকে ফোকাস না করে স্ট্রাইক রোটেট করার দিকেই মনোযোগ দিলেন। আর এতেই বাজিমাত দিলেন প্রীতম-জয়দীপ জুটি। দুজনের পার্টনারশিপে চার উইকেটের দারুন একটা জয় ছিনিয়ে নেয় শিলচর।‌ জয়দীপ অপরাজিত থাকেন ৩০ রানে। আর প্রীতম অপরাজিত থাকেন ২৭ রানে।

এর আগে প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও অর্ধশতরান করেন ডানহাতি ওপেনার অমন সিং। প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৫১। দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রচণ্ড চাপের মধ্যে খেললেন ৫৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ এক ইনিংস। আমিন গাঁওয়ের উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন ছিল। বিশেষ করে তিনসুকিয়ার ধারাবাহিক স্পিন অ্যাটাক এর বিরুদ্ধে রান করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে এমন কন্ডিশনে দারুন ব্যাটিং করলেন অমন। একজন স্ট্রোক মেকার হিসেবে তাঁর পরিচিতি থাকলেও তিনসুকিয়ার বিরুদ্ধে স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাটিং করলেন এই ডানহাতি ওপেনার। বড় শটের দিকে না গিয়ে স্পিনারদের বিরুদ্ধে স্ট্রাইক রোটেট করে খেললেন। ব্যাটিং করলেন অনেকটা দায়িত্ব নিয়ে। রাজ্য দলের আরেক তারকা অভিষেক ঠাকুরি ১৪ রান করেন। ১০৬ রানের দলীয় স্কোরে অমন ফিরে যাবার পর প্রচণ্ড চাপে পড়ে গিয়েছিল শিলচর। তবে প্রীতম ও জয়দীপ নিজেদের অভিজ্ঞতা দিয়ে ম্যাচ বের করে আনলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে চার উইকেট শিকার করেন তিনসুকিয়ার লেগ স্পিনার আকাশ ছেত্রী।

লো স্কোরিং এই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে তিনসুকিয়া তাদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছিল ১৪৯ রানে। ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন সঞ্জীব দত্ত। চারটি পেয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার রাহুল সিং। জবাবে শিলচর তাদের প্রথম ইনিংসে করে ১৬৩। ১৪ রানের লিড পায় তারা। একটা সময় ১৪৪ রানে আট উইকেট চলে গিয়েছিল শিলচরের। সেখান থেকে দলকে লিড এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অমিত যাদব। তিনি ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। তিন দিনের ম্যাচে প্রথম ইনিংসের লিড কিন্তু ভাইটাল ফ্যাক্টর।‌ দ্বিতীয় ইনিংসে তিনসুকিয়া অলআউট হয় ১৭৭ রানে। এবার ছয় উইকেট শিকার করেন রাহুল সিং (৬-৪১)। ফলে ম্যাচে তার শিকার দশ উইকেট।

এবার ফাইনালের টিকিট আদায়ের লক্ষ্যে তেজপুর এর বিরুদ্ধে খেলতে নামবে শিলচর। ‌ বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে তিন দিনের এই ম্যাচটি শুরু হবে ২৬ মে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, গুয়াহাটি কে টপকে সেমির টিকিট আদায় করেছে তেজপুর। রাজ্যের আরেক হেভিওয়েট দল এনএফ রেল ও টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে। সেমিফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করেছে বিশ্বনাথ চারিয়ালি ও ডিব্রুগড়।

সেমিফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করা খুশি শিলচরের কোচ রাজীব দাস। শিলচর দলের দলগত পারফরম্যান্সের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা দল হিসেবে খেলতে পেরেছি। এটাই আমাদের সাফল্য এনে দিয়েছে।’ তিনসুকিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক ক্রিকেটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে ম্যাচের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে প্রীতম দাস ও জয়দীপ সিংয়ের পার্টনারশিপকে দেখছেন শিলচরের কোচ। তিনি বলেন, ‘অমন সিং প্রাপ্ত সুযোগ দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছে। ‌ দুটো ইনিংসেই ও অসাধারণ ব্যাটিং করেছে। প্রথম ইনিংসে চাপের মধ্যে ভালো খেলেছে অমিত যাদব। ওর জন্যই আমরা লিভ নিতে সফল হয়েছি। ‌ এছাড়া রাহুল সিং দু ইনিংসে দুর্দান্ত বোলিং করেছে। তবে আমি মনে করি প্রীতম ও জয়দীপ এর পার্টনারশিপটাই ম্যাচের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। ওরা দুজনেই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে খেলেছে। ‌ দুজনই নিজেদের অভিজ্ঞতা খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে।’
ম্যাচটা জিতলেও সেমিফাইনালের আগে আরও উন্নতি করতে চান শিলচর কোচ। বিশেষ করে দলের স্পিন আক্রমণে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বলেন, ‘এই ধরনের উইকেটে আপনার বোলিং এর ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। আমি মনে করি আমাদের তুলনায় তিনসুকিয়ার স্পিন আক্রমণ অনেক বেশি ধারাবাহিক ছিল। সেমিফাইনালে নামার আগে আমাদের এই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।’

Comments are closed.