শিলচর ডি এস একে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি, অসম অলিম্পিক সংস্থাকেও চিঠি দিল ইউ এস এ (নতুন পক্ষ)
সম্প্রতি জিবি বৈঠকে উধারবন্দ ক্রীড়া সংস্থার (ইউ এস এ) পুরনো পক্ষকেই বৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পুরনো কমিটিকে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না ইউএসএর নতুন পক্ষ। তারা ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত পুনঃ বিবেচনার জন্য শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে চিঠি দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, পুরো বিষয়টা নিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে অসম অলিম্পিক সংস্থাতেও।
উদারবন্দ স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন এর টাইটেল রাইটস নিয়ে দুই পক্ষের ঝামেলা বেশ কিছুদিন থেকেই চলছে। একপক্ষের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে ইউএস এর কোন সভা হয়নি। কোনো খেলাধুলা আয়োজন করা হয়নি। সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে কাজকর্ম করছে ইউ এস এর কমিটি। আর এই কমিটির প্রতিনিধি আবার শিলচর ডিএসএতে প্রতিনিধিত্ব করছেন ইউএসএর। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। আবার যারা এতদিন কমিটিতে রয়েছেন তাদের দাবি, তারাই ইউএস এর সত্যিকারের প্রতিনিধি। তারাই বৈধ। নতুন পক্ষ অবৈধ। যাইহোক, এমনটা দাবি করলেও ইউএস এর পুরনো কমিটি শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার হাতে কোনো তথ্য প্রমাণ তুলে দিতে ব্যর্থ হয়। এমনকি নিজেদের কোনো প্রসিডিংস তারা দিতে পারেনি। এদিকে নতুন পক্ষ-র বক্তব্য ছিল, ‘আমরা তো নতুন, তাহলে আমাদের হাতে কোন কিছু না থাকাটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘ দিন থেকে কোমায় চলে যাওয়া উদারবন্দ স্পোর্টসকে চাঙ্গা করতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’ তাদের সমর্থনে ছিল উদারবন্দ তথা আশপাশের ৪০টিরও বেশি ক্লাব ও সংগঠন।
ইউএস এ নিয়ে দুই পক্ষের লড়াইয়ে সমস্যায় পড়েছিল শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থাও। তবে যেহেতু কোনো পক্ষই নিজেদের পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি তাই পুরো বিষয়টি কে হোল্ড করে রেখেছিল বিজেন্দ্রপ্রসাদ সিং নেতৃত্বাধীন কমিটি। অনেক চেষ্টা করে ওই বিবাদের মীমাংসা করা যায়নি। দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও নয়। বিষয়টিকে হোল্ড রাখা ছাড়া ডিএস এর কিছু করার ছিল না।
কিন্তু গত বছর ডিসেম্বরে জিবি বৈঠকে হঠাৎ করে চলে আসে ইউএসএ ইস্যু। সমাধানের জন্য একটা তদারকি কমিটি ও গঠন করে দেওয়া হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সংবিধান বলছে, সংস্থা নিজেদের ক্লাব অথবা সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। অথচ জিবি বৈঠকে এই বেআইনি কাজটাই করল শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। যেভাবে অসম অলম্পিক সংস্থা তাদের সংবিধানের তোয়াক্কা না করে শিলচর ডিএসএর অভ্যন্তরীণ বিষয় নাক গলিয়েছিল, ইউএস এর বিতর্কিত ইস্যুতে ঠিক সেই বেআইনি কাজটাই করল শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এখানেই শেষ নয়, ইউএসএ’র দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও যেখানে বিবাদের মীমাংসা করা যায়নি, সেখানে দু পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করেই তদারকি কমিটি নিজেদের রিপোর্ট ও দিয়ে দিল? আর সেই রিপোর্টে বৈধতা ও দিয়ে দিল ইউএস এর পুরনো কমিটিকে! এরপর সম্প্রতি জিবির বৈঠকে কমিটির রিপোর্টে সিলমোহর দেওয়া হল।
মজার বিষয় হচ্ছে, তদারকি কমিটির যে রিপোর্ট পেশ করেছে তার প্রথম পয়েন্টেই বলা হয়েছে, অন্য একটা সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ডিএস এর নাক গলাবার দরকার নেই। এরপর আর রিপোর্টে কিছু থাকতে পারে কি? তবে এই রিপোর্টে রয়েছে। দ্বিতীয় পয়েন্টটিতে আবার বলা হয়েছে ইউএস এর পুরনো কমিটি বৈধ! বিষয়টা কি হাস্যকর নয়? কিসের ভিত্তিতে তদারকি কমিটি এমনটা বলছে? নাকি পুরো বিষয়টাই ছিল প্রি প্ল্যানড! ইউ এস এর পুরনো কমিটিকে বৈধতা দিতেই এই তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আর প্লেন অনুসারী রিপোর্ট পেশ করেছে তদারকি কমিটি।
এমনটা করে ডি এস এ কিন্তু নিজেরাই খাল কেটে কুমির ডেকে আনার পথ করে ফেলেছে। আর যদি এই বিতর্কিত ইস্যুর জল আদালতে গড়ায় তাহলে ডিএসএ মুখ রক্ষা করবে কিভাবে?
এদিকে, জিবি সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে আর্জি জানিয়েছে ইউএস এর নতুন পক্ষ। নতুন কমিটির সহ-সভাপতি নবারুণ চক্রবর্তী জানান, সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করার জন্য আমরা শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে আর্জি জানিয়েছি। সঙ্গে পুরো বিষয়টি নিয়ে চিঠি দিয়েছি অসম অলিম্পিক সংস্থা তেও। যদি শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা তাদের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা না করে তাহলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, সম্প্রতি জিবিতে ইউএসএ ইস্যু নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল, সংস্থার সচিব বিজেন্দ্রপ্রসাদ সিং বৈঠকের প্রসিডিংসে নোটস লিখিয়ে রাখেন। তার বক্তব্য ছিল, ডি এস এ কোনো ক্লাব অথবা সংস্থার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারে না। সংবিধান এর মান্যতা দেয় না। তাই আগামীতে এ নিয়ে আইনি ঝামেলা হলে তিনি এর দায় নেবেন না। এরপরও ইউএসএ বিতর্ক নিয়ে জিবিতে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর ফলে সংস্থার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রকাশ্যে এসেছে। ব্যক্তি বিশেষের স্বার্থের জন্যই ইউএসএ বিতর্ক নিয়ে নাক গলিয়েছে শিলচর জেলা ক্রীড়া সংস্থা। এতে সংস্থার ক্ষতি, ব্যক্তি বিশেষের লাভ হয়েছে।
Comments are closed.