কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে আজ মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করলেন বিচারক
হাইলাকান্দি জেলার বেতছড়া গ্রামের ত্রয়োদশী কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা কান্ডে প্রধান অভিযুক্ত জসিম উদ্দিনকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করলেন বিচারপতি দেবাশিষ ভট্টাচার্য।
গত পয়লা অক্টোবর জেলা ও দায়রা বিচারপতি দেবাশিষ ভট্টাচার্য তাকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় দিলেও সাজা ঘোষণা করেননি। আজ বিচারপতি দেবাশিষ ভট্টাচার্য অভিযুক্ত জসিম উদ্দিনকে ৩০২ ধারায় খুনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড এবং ৩৭৬ ধারায় ধর্ষনের অপরাধে দশ বছরের কারাদণ্ড সহ দশ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষনা করেন। অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ডের সাজা ঘোষনা করেন।
বিচারপতি এদিন রায় ঘোষনা করে বলেন, “এ পৃথিবীতে তোমার বাঁচার কোন অধিকার নেই। তোমাকে আমি মৃত্যুদণ্ড দিলাম।” যদিও ওই সময় জসিম উদ্দিন কিছুই বলতে পারেনি। এর আগে গত এক অক্টোবর হাইলাকান্দির জেলা এবং দায়রা বিচারপতি দেবাশিস ভট্টাচার্য মামলার রায় ঘোষণা করতে গিয়ে জানান যে, “দক্ষিণ হাইলাকান্দির বেতছড়া গ্রামের উপজাতি কিশোরী হত্যা মামলার প্রধান অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন বড়ভুইয়ার বিরুদ্ধে আনা যাবতীয় অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। এখন শুধু তার সাজা ঘোষনা করা হবে। তাকে কি ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে তা আগামী চার অক্টোবর ঘোষণা করা হবে”। বিচারপতি ভট্টাচার্য দোষী জসিম উদ্দিন বড়ভুইয়াকে কি ধরনের শাস্তি হওয়া দরকার, এ ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ এবং সময় দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রায় চার মাস আগে গত ১৪ মার্চ দক্ষিণ হাইলাকান্দির বেতছড়া গ্রামের কিনিরুং রিয়াং হত্যাকান্ড নিয়ে সমগ্র দেশে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। তোলপাড় হয়েছিল অসম ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন রাজ্য। মোমবাতি মিছিল থেকে আরম্ভ করে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল হত্যাকারির ফাঁসির দাবিতে, যার ফলে অতি দ্রুত এই মামলার শুনানি চলে এবং অবশেষে রায়দানের তারিখ চুড়ান্ত করা হয়।
Read more: Hailakandi Minor Rape Case: Jasimuddin Convicted By Court
এদিন কিনিরুং রিয়াং মামলার রায় শুনার জন্য আদালতে ভীড় লক্ষ্যনীয় ছিল। এ মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন উজ্জল কুমার দাস। তিনি জানান দক্ষিণ হাইলাকান্দির বেতছড়া গ্রামের মুক্তাজয় রিয়াং এর ত্রয়োদশী কন্যা কিনিরুং রিয়াংকে তার বাড়িতে ঢুকে বলপূর্বক ধর্ষণ করে গলা কেটে হত্যা করেছিল জসিম উদ্দিন বড়ভুইয়া। তারপর খুন এবং ধর্ষণর যাবতীয় প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল অপরাধী। ঘটনার পর কিনিরুং এর কাকা কামান্তা রিয়াং এমর্মে রামনাথপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ৪৭/২০২৮ নম্বরের মামলা নথিভুক্ত করে তদন্ত আরম্ভ করে।
এরপর পুলিশ ২০১৮ সালের ১১ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। আদালতে জি আর ৪৬৭ নম্বরে মামলাটি নথিভুক্ত করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
লোমহর্ষক এই ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মোট ২১ জন সাক্ষীর জবানবন্ধি আদালতে রেকর্ড করা হয়। তাদের মধ্যে হাইলাকান্দির অতিরিক্ত পুলিশসুপার জগদীশ দাশ, ডিএসপি নয়নমণি বর্মন, ডাক্তার আর বি মালাকার, আবুল হুসেন বড়ভুইয়া, সার্কল অফিসার ধ্রুবজ্যোতী চক্রবর্তী, ফরেন্সিক অফিসার রেনুবরা হেন্ডিক, পুলিশের এসআই সাব্বির আলি, কাটলিছড়ার সার্কল অফিসার জেমস আইন্ড সহ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সহ অন্যদের স্বাক্ষী গ্রহণ করা হয়। প্রায় চার মাস মামলা চলার পর এদিন আদালত অভিযুক্তকে দোষী বলে ঘোষণা করে।
Comments are closed.