Also read in

শিলচরে দাঁড়িয়ে কা-বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে গেলেন এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিং

কংগ্রেসের নির্বাচনী প্রচারের অধীনে ‘৫-গ্যারান্টি যাত্রা’ নিয়ে শনিবার শিলচরে উপস্থিত হন দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জিতেন্দ্র সিং। ‌সম্প্রতি রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী অসম সফরে এসে বলেছেন তাদের সরকার ক্ষমতায় এলে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ‘কা’ বাতিল করা হবে। বরাক উপত্যকায় প্রতিবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে কংগ্রেস দলকে। বরাকের নেতারা সরাসরি আইনের বিরুদ্ধে না গেলেও এর সংশোধন চেয়েছেন। তবে জিতেন্দ্র সিং শিলচরে বসেই জানিয়ে দেন, দলের অবস্থান সব ক্ষেত্রেই এক সমান, তারা এই আইনের বিরোধিতা করেন এবং ক্ষমতায় এলে এটা বাতিল করার প্রয়াস নেওয়া হবে।

এদিন কাছাড় ক্লাবে প্রাক্তন সাংসদ তথা এবার নির্বাচনে দলের স্টার ক্যাম্পেনার সুস্মিতা দেব এবং শিলচরের প্রার্থী তমাল বণিককে পাশে বসিয়ে তিনি বলেন, “রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যে কথাগুলো অসমের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলেছেন, সেটা দলের প্রত্যেক সদস্যের অভিমত। এই আইন কোনভাবেই উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেবে না। এর মাধ্যমে যারা নাগরিকত্ব দাবি করবেন তাদের আগে প্রমাণ করতে হবে তারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। পাশাপাশি এটাও প্রমাণ করতে হবে তাদের সঙ্গে সেখানে ধর্মীয় ভিত্তিতে অত্যাচার হয়েছে। এরপর আইনের সুবিধা নেওয়ার যোগ্যতা পাবেন তারা। কেন একজন ভারতীয় আগে নিজেকে বাংলাদেশী হিসেবে প্রমান করবেন? এটা বিজেপি কখনোই স্পষ্ট করে বলে না কারণ তারা জানেন এই আইন একটি রাজনৈতিক চমক মাত্র। আমাদের দল চায় উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পাক, কিন্তু এভাবে নয়। ফলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা হোক বা বরাক উপত্যকা, আমরা কা-য়ের সরাসরি বিরোধিতা করছি। আমাদের সরকার এলে সর্বশক্তি দিয়ে এই আইন বাতিল করা হবে।”

সুস্মিতা দেব এবং তমাল কান্তি বণিক তার পাশে বসে থাকলেও এই বিষয়ে তারা কোনো মতামত তুলে ধরেননি অথবা বিরোধিতা করেননি।

এদিন সকাল সাড়ে দশটায় জিতেন্দ্র সিংয়ের হাত ধরে কংগ্রেস ভবন থেকে শুরু হয় ‘৫-গ্যারান্টি যাত্রা’। গান্ধীবাগে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে শহরের অন্যান্য রাস্তা হয়ে ফাটক বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করতে যান তিনি। সঙ্গে ছিলেন সুস্মিতা দেব, তমাল কান্তি বণিক, মিসবাহুল ইসলাম লস্কর, সজল বনিক সহ অন্যান্যরা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথাবার্তার প্রসঙ্গ টেনে জিতেন্দ্র সিং বলেন, “বিজেপি সারা দেশে জিএসটি নামের কর বসিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। কিন্তু বরাক উপত্যকার মানুষকে আরও দুটি বিশেষ কর দিতে হয়, সেগুলো হচ্ছে সর্বা-হিমন্ত কর। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন কিভাবে প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রে সরকারের এই দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির জন্য আলাদা কর দিতে হয়। এর প্রভাব পড়ে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধিতে। অন্তত এই কারণে বরাক উপত্যকার জনগণকে বর্তমান বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো উচিত।”

এদিন কাছাড় ক্লাবের একটি হলে শিক্ষিত-বেকার যুবক-যুবতীদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগ দেন জিতেন্দ্র সিং। তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন এবং সেগুলো আগামীতে দলের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যেই আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে। এতে বরাক উপত্যকার জন্য বিশেষ জায়গা রাখা রয়েছে। আমরা আমরা প্রতিশ্রুতি দিই না ফলে প্রচারের নাম রাখা হয়েছে ‘৫-গ্যারান্টি যাত্রা’। আমাদের সরকার এলে পাঁচলক্ষ যুবক যুবতীকে চাকরি দেওয়ার পাশাপাশি, তাদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীতে বরাক উপত্যকায় স্থানীয়দের জন্য ৮০ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়া হবে।”

জিতেন্দ্র সিং শিলচরে এসে মহিলা সুরক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা বললেও এই বছর নির্বাচনে বরাক উপত্যকায় কংগ্রেস দলের একজন প্রার্থী ও মহিলা নন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে বলা হয়েছে গৃহিনীদের প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে দেওয়ার পরিকল্পনা। এছাড়া চাকরির ক্ষেত্রে মহিলাদের পঞ্চাশ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কংগ্রেস দলের মহিলা শাখার জাতীয় সভানেত্রী হচ্ছেন শিলচরের সুস্মিতা দেব। তাকে অতীতে দল প্রার্থী করেছে এবং তিনি জয়ী হয়েছেন। ফলে মহিলাদেরও উপেক্ষা করার প্রশ্নই উঠে না।”

Comments are closed.

error: Content is protected !!