Also read in

সীমান্তে সেনা জওয়ানদের মতো প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা: সুস্মিতা

সীমান্তে সেনা জওয়ানরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে দেশের জন্য কাজ করেন, তাদের মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা থাকে না। ঠিক একইভাবে ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করছেন। কথাগুলো আমি এতদিন শুনেছিলাম এবার অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকায় চোখের সামনে দেখেছি। আমার পজিটিভ হওয়া নিয়ে প্রথমে একটা ধোঁয়াশা ছিল, যেভাবে তারা আমাকে জানিয়েছিলেন, এতে প্রাথমিকভাবে কিছুটা অখুশি ছিলাম। তবে এটা এখন অতীত, এবিষয়ে কথা বলার আর কোনও মানে হয়না। যেটা বলা অত্যন্ত জরুরি সেটা হচ্ছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যেসব মানুষ কাজ করছেন তাদের কথা। আমি তাদেরকে এক কথায় কুর্ণিশ জানাই, এমনটাই বললেন শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেব।

শনিবার সন্ধ্যেবেলা তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে এবং রবিবার তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। তবে তিনি আপাতত বাড়ি যেতে পারবেন না, কারণ জেলাশাসক কীর্তি জল্লি তাকে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি যেন আগামী ১৪ দিন নিজেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখেন।

হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে ফোনে আমাদের বলেন, “প্রায় ১১ দিন চোখের সামনে স্বাস্থ্যকর্মীদের কার্যকলাপ দেখার সুযোগ হয়েছে। প্রত্যেকে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করেছে কিন্তু এর থেকেও প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে, তাদের কাজের ধরন। একবার পিপিই কিট লাগালে টানা প্রায় ১০ঘন্টা খোলা যায়না। এক মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারলাম, একদিন তার মাসিক মেন্সুরেশন ছিল, তবু ছোট্ট মেয়েটি পিপিই কিট লাগিয়ে কাজ করছে। এটা কতটুকু অসুবিধার, সেটা শুধুমাত্র একজন মহিলা ছাড়া কেউ বুঝবে না। এধরনের আরও অনেক ঘটনা আমি দেখেছি এবং গল্প শুনেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সহ প্রত্যেককে আমি শ্রদ্ধা জানাই, তারা যে কাজটা করছেন আমরা বাইরে থেকে ভাবতেও পারিনা। তবে আমি এই পুরো ব্যবস্থায় কাজ করা মহিলাদের কথা আগে বলব। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে দেবদত্বা ধর প্রথম দিন থেকে সোয়াব স্যাম্পল পরীক্ষা করে আসছেন। তিনি জানেন তাঁর হাতের সামনে করোনা ভাইরাস রয়েছে, তবু ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজারেরও বেশি স্যাম্পল পরীক্ষা করছেন। এভাবেই বিভিন্ন ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সব ভয় কাটিয়ে মানুষের উদ্দেশ্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই দুঃসময়ে আমরা তাদের সরাসরি হয়তো সহায়তা করতে পারিনা, কিন্তু নিজেরা সচেতন থেকে পুরো সমাজের জন্য ভাল করতে পারি। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের যখন চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হবে, প্রত্যেকে যেন স্বাস্থ্য কর্মীদের সহায়তা করেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রত্যেকের সঙ্গে অত্যন্ত ধৈর্যশীলভাবে সুন্দর ব্যবহার করছেন।”

৮ জুলাই শিলচরের প্রাক্তন সাংসদ তথা জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুস্মিতা দেব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সম্প্রতি তার দ্বিতীয় পরীক্ষা হয় এবং শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তার রিপোর্ট নেগেটিভ। অর্থাৎ তিনি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
জুন মাসে দিল্লি থেকে ফেরার পর বাড়িতেই হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন সুস্মিতা। এরপর বেশ কয়েকটি জনসমাগমে যোগ দিয়েছেন। একটি অনুষ্ঠানে গ্রিন হাসপাতালের কর্ণধার রুদ্র নারায়ণ গুপ্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন, ৩০ জুন একটি অনুষ্ঠানে তাদের দেখা হয়। পরবর্তীতে রুদ্র নারায়ণ গুপ্ত পজিটিভ হন এবং এর তিনদিনের মাথায় সুস্মিতা দেব নিজে পজিটিভ হন।

সুস্মিতা দেব কাছাড় জেলায় প্রথম কোনও বড় মাপের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। তবে পজিটিভ হওয়ার খবর নিয়ে প্রথমে কিছুটা ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছিল। তবে এসব ব্যাপারে এখন আর কথা বলতে চাইছেন না প্রাক্তন সাংসদ।

রবিবার দুপুরে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছোটখাটো একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা দেবকে বিদায় জানানো হয়। হাসপাতাল সুপার ডাঃ অভিজিৎ স্বামী সহ অন্যান্য চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।

Comments are closed.

error: Content is protected !!