গোষ্ঠী সংক্রমনের প্রথম ধাপে ঢুকে পড়েছে কাছাড়, জানালো স্বাস্থ্য বিভাগ; চিকিৎসক ওরিনা রাহার 'দায়িত্বজ্ঞানহীন' ব্যবহারে ক্ষুব্ধ বিভাগ
কাছাড় জেলায় শুক্রবার বিকেল চারটা পর্যন্ত পাঁচ ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এরা প্রত্যেকেই আক্রান্ত চিকিৎসক ওরিনা রাহার সংস্পর্শে আসা লোক। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ৮ জন লোক ট্রাভেল হিস্ট্রি ছাড়া আক্রান্ত হয়েছিলেন, শুক্রবার এই তালিকায় আরও পাঁচ ব্যক্তি যোগ হয়েছেন। এতে কাছাড় জেলায় গোষ্ঠী সংক্রমনের লক্ষণ স্পষ্ট দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে শুক্রবার স্পষ্ট জানানো হয়েছে, গোষ্ঠী সংক্রমনের প্রথম ধাপে ঢুকে পড়েছে কাছাড়। আগামীতে ভ্রমণ বৃত্তান্ত ছাড়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিন বিকেলে সরকারি বুলেটিনে অংশ নিতে গিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক সুমন চৌধুরী জানিয়েছেন, জেলায় এক সপ্তাহের মধ্যে ১৭ জন ব্যক্তি ভ্রমণ বৃত্তান্ত ছাড়া পজিটিভ হয়েছেন, এর মানে হচ্ছে কাছাড় জেলায় গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। গুয়াহাটিতে প্রথম পর্যায়ে কয়েকটি বিশেষ এলাকা নির্ধারণ করে সেগুলোয় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে হয়তো কাছাড় জেলায়ও একইভাবে বিশেষ কিছু এলাকা লকডাউনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। রাজ্য সরকারের তরফে এখনো লকডাউনের বিষয়ে স্পষ্টভাবে পুরোপুরি জানানো হয়নি। তবে যেসব এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে সেগুলো সিল করে দেওয়া হতে পারে।
এদিকে সম্প্রতি আক্রান্ত হওয়া চিকিৎসক ওরিনা রাহার দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “ওরিনা রাহা একজন চিকিৎসক হয়ে যেভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন তাতে পুরো স্বাস্থ্য বিভাগ অত্যন্ত হতাশ। তার এক বোন সম্প্রতি দিল্লি থেকে ফেরত আসেন এবং প্রাথমিক টেস্টে তার নেগেটিভ আসে। তবু পরবর্তী টেস্ট না হওয়া পর্যন্ত তার সংস্পর্শে কেউ আসার কথা ছিল না। আমরা শুনেছি, চিকিৎসক ওরিনা রাহা তার বোনের সংস্পর্শে এসেছেন। এরপর তিনি প্রাইভেট চেম্বারে অনেক রোগী দেখেছেন। ফলে কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ে কাছাড় জেলা শহর হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জের মানুষের নাম উঠে আসছে। তার সংস্পর্শে এসে এখন পর্যন্ত ছয় ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে ৫০ জনের বেশি লোকের নাম কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ে উঠে এসেছে। এদের প্রত্যেকের পরীক্ষা করার পর হয়তো আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। পজিটিভ হওয়ার পর চিকিৎসকটি তার কন্টাক্ট হিস্ট্রি পুরোপুরিভাবে জানাননি, কিছুটা চেপে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে যেখানে তিনি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন সেই চেম্বার থেকে তথ্য নিয়ে কন্টাক্ট ট্রেসিং চলছে।”
এছাড়া, কালাইনের শুক্লা মাহাতো নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি পজিটিভ হয়েছিলেন। তিনি কালাইন সরকারি হাসপাতালের নার্স, ফলে হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার-নার্স সহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হবে। তবে এই পরিস্থিতিতে এত বড় একটা হাসপাতাল পুরোপুরি ভাবে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে হাসপাতালটি স্যানিটাইজ করার পর বাইরে থেকে ডাক্তার নার্স এবং স্বাস্থ্য কর্মী নিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা অব্যাহত রাখা হবে
রংপুর এলাকার সুপ্রীতি পাল নামের মহিলা আক্রান্ত হওয়ার পরের দিন তার তিন ছেলের পজিটিভ আসে। এবার জানা গেছে, পরিবারের কেউ একজন শিলচর শহরে জানিগঞ্জ এলাকায় ঘোরাফেরা করেছেন, সেই এলাকাগুলো আগামীতে সিল করে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন পাড়ায় ক্যারম বোর্ড খেলার নামে প্রচুর জনসমাগম চোখে পড়ছে। এবার কেউ যদি আক্রান্ত হয়ে ক্যারম বোর্ড খেলতে আসেন, তাহলে তার সঙ্গে এলাকার অনেক পরিবারের মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়বেন। আমরা পুলিশের কাছে এব্যাপারে জানিয়েছি, তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
কাছাড় জেলায় এসিএসপি এবং এটিএসপি’র আওতায় প্রত্যেক ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ চলছে। আগামীতে সাধারণ মানুষকে আমাদের পাশে দাঁড়াতেই হবে, এমনটা না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের, শিলচরের সিভিল হাসপাতালের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আগামীতে কচুদরম প্রাথমিক চিকিৎসালয়কে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে।
Comments are closed.