বরাক উপত্যকার একটি স্কুলে হিজাব বাধ্যতামূলক করার পর বাধ্য হয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার
বরাক উপত্যকার একটি স্কুলে স্কুল পড়ুয়া সমস্ত মেয়েদের জন্য ‘হিজাব’ বাধ্যতামূলক করেছিলেন স্কুলের একজন প্রবীণ শিক্ষক। শিক্ষক এবি হান্নান স্কুলে তার এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর ফেসবুকেও লিখেছিলেন,”ছাত্রীদেরকে কুদৃষ্টি থেকে বাঁচাতে এবং মেয়েদের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট ব্যক্তিত্বের অংশ হিসেবে আজ থেকে হিজাব পরিধান বাধ্যতামূলক করলাম”। ঘটনাটি করিমগঞ্জের ইস্ট পয়েন্ট পাবলিক স্কুলের। স্কুলটি আসামের মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদিত এবং করিমগঞ্জের কানিশাইল বাহাদুর শাহ জাফর রোডে অবস্থিত।
স্কুলের শিক্ষক হান্নান বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, আশেপাশের কু-মানসিকতার ছেলেরা স্কুলের ছাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। কাজেই সেই দুষ্ট লোকদের হাত থেকে তার ছাত্রীদের বাঁচানোর জন্যই তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, হিজাব হচ্ছে এক নির্দিষ্ট ধর্ম অনুসরণকারীদের জন্য একটি ধর্মীয় পরিধান রীতি।অন্যদিকে বিদ্যালয়টি সবার জন্যই উন্মুক্ত এবং রাজ্যের শিক্ষা বোর্ডের অধীনে নিবন্ধভূক্ত হওয়ায় ইউনিফর্মের ক্ষেত্রে স্কুলের জন্য নিজস্ব গাইডলাইন রয়েছে। কোনও সরকারি বিদ্যালয়ে ধর্মীয় পোশাক রীতি চাপিয়ে দিলে কোনো সমস্যা তৈরি হতে পারে কিনা জানতে চাইলে হান্নান জানান,” এই মুহূর্তে আমাদের একশ শতাংশ শিক্ষার্থী মুসলমান।তাই যখন আমি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলাম তখন আমি স্পষ্ট করে বলেছিলাম, ভবিষ্যতে কোনও হিন্দু শিক্ষার্থী ভর্তি হলে আমরা কি করতে পারি তা ওই সময় দেখা যাবে”।
তিনি এও জানালেন যে ছাত্রীরা তার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল।” আমাদের ইসলাম নিয়ে একটি বিষয় রয়েছে এবং তা শিক্ষার্থীদের আধ্যাত্বিকতার দিকে পরিচালিত করে। ওই ক্লাসে তারা নিজেরাই তাদের মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় যা কিনা আজান বা প্রার্থনার সময় কিংবা কোন মন্দিরের সামনে মহিলারা করে থাকেন”, তিনি যোগ করেন।
এদিকে তার ফেসবুক পোস্টটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কেউ কেউ যদিও এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। কিন্তু অন্যদিকে অনেকেই এটিকে সংকীর্ণ মনের কাজ বলে মন্তব্য করেন। হান্নান জানান যে আজ স্কুল পরিচালনা কমিটি এক সভা ডেকে ছিল এবং সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে হিজাবকে বাধ্যতামূলক করার এই পদক্ষেপ অবিলম্বে প্রত্যাহার করা উচিত। সেই সঙ্গে পোস্টটি ফেসবুক থেকে প্রত্যাহার করার জন্য এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার জন্য হান্নানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই নির্দেশের পর হান্নান ফেসবুক থেকে তার পোস্টটি মুছে ফেলেন। সেই সঙ্গে তিনি ফেসবুকে বাংলায় একটি পোস্ট দেন, “হিজাব নিয়ে পোস্ট করায় অনেকের ভাবাবেগে আঘাত এসেছে এবং স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে সবুজ সংকেত না মেলায় হিজাবকে ঐচ্ছিক করে আমার পূর্ববর্তী পোস্টকে ডিলিট করেছি।অনিচ্ছাকৃত আঘাতের জন্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থী,জয় হিন্দ!”
বরাক বুলেটিনের সঙ্গে কথা বলার সময়ও হান্নান ক্ষমা চেয়ে নেন। তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম এটি একটি সঠিক পদক্ষেপ হবে এবং ছাত্রীদেরকে হয়রানির হাত থেকে মুক্ত করবে। তবে আমি এখন স্বীকার করছি যে আমি ভুল করেছিলাম। যাদেরকে আমি আমার শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করি তারা হিজাব বাধ্যতামূলক করার আমার এই সিদ্ধান্তে আহত হয়েছেন। আমি তাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি”।
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, দুষ্ট লোকের হাত থেকে বাঁচতে মেয়েদের কি লম্বা পোশাক পরা কিংবা মুখ ঢেকে দেওয়া উচিত? কিংবা তার বদলে কি ছেলেদের নিজেদের ব্যবহার সংযত করা উচিত নয়? এসব প্রশ্নের উত্তর আমাদের সবার জানা। তবু মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বরাবরই রয়েছে। বলা যায়, দীর্ঘ তালিকায় এটি ছিল আরো এক সংযোজন। তবে ম্যানেজমেন্ট সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দিয়েছে।
Comments are closed.