Also read in

আপাতত হচ্ছেনা লকডাউন, মাস্ক ছাড়া দোকান খুললে লাইসেন্স বাতিল

আপাতত লকডাউন ঘোষণা করার পক্ষে নয় প্রশাসন এবং সরকার। কিছুদিন আগে মন্ত্রী পীযূষ হাজারিকা শিলচর এসে বলেছিলেন, লকডাউনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে, এরপরই কোন সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। বৃহস্পতিবার জেলাশাসক কীর্তি জল্লি জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ডেকে একটি সভা আয়োজন করেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, লকডাউনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ খুব একটা আটকানো যাবে না, বরং এতে গরিব শ্রেণীর মানুষের ক্ষতি হবে। ফলে অন্য পদ্ধতিতে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাবে প্রশাসন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে সাংসদ রাজদীপ রায় জানিয়েছেন, বৈঠকে অংশ নেওয়া অধিকাংশ নাগরিক পুরোপুরি লকডাউনের বিরুদ্ধে ছিলেন, হাতেগোনা দু’একজন যদিও এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন চালু করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রত্যেকেই বলেছেন, লকডাউনের ফলে সাধারণ জনজীবন বিপন্ন হয়, অথচ এক সপ্তাহ মানুষকে ঘরে আটকে রেখে খুব একটা সংক্রমণ রোধ হবে এমনটাও নয়। ফলে এখন আমাদের সব থেকে প্রয়োজনীয় ব্যাপার হচ্ছে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বাধ্য করা। পাশাপাশি, প্রত্যেকে যাতে সামাজিক দূরত্বের নিয়মগুলো পালন করেন সেদিকে নজর রাখা।”

অনুষ্ঠানে পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত চিকিৎসক রবি কান্নান সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত ভাবে তার অভিমত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র নিয়ম বানিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। আবার জোর করে লাঠিপেটা করেও কাউকে সচেতন করা সম্ভব নয়। আলোচনার মাধ্যমেই আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। সমাজ যখন পুরোপুরিভাবে সচেতন হয়ে সবগুলো নিয়ম পালন করতে শিখে যাবে তখন আমরা এই ভাইরাসকে টেক্কা দিতে সমর্থ হব। এজন্য প্রয়োজন সমাজের প্রত্যেক স্তরে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া, এক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকেই নিজের মত যোগদান দিতে পারি।”

বৈঠকের উদ্দেশ্য নিয়ে জেলাশাসক কীর্তি জল্লি বলেন, “প্রশাসন পুরোপুরিভাবে নিজেকে নিয়োজিত করে ভাইরাস সংক্রমণ আটকানোর চেষ্টা করছে। একের পর এক হাসপাতাল গড়ে তোলা হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সাধারণ মানুষকে নিজের থেকে এগিয়ে এসে সচেতনতার প্রমাণ দিতে হবে, এটা তারা নিজের জন্যই করবেন, এমনটা আমরা আশা রাখি। আমরা অতীতেও এই ধরনের বৈঠক করেছিলাম এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, লকডাউন চালু করা হবে না। এতে বিভিন্ন স্তরের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। আমরা চাইব সাধারণ মানুষ সচেতন হয়ে নিয়মগুলো পালন করেন তাহলেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে।”

জেলাশাসক এদিন কাছাড় জেলার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছে আবেদন জানান, তারা যেন এব্যাপারে জোরালো আওয়াজ তোলেন। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা কোনো বার্তা দিলে যুবসমাজ সেটা বেশি করে শুনবে, এমনটাই আশা জেলাশাসকের।

পুলিশ সুপার বিএল মিনা বৈঠকে বলেন, “সাধারণ মানুষের মধ্যে দায়িত্বশীল হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসন নিজের মতো করে কাজ করবে কিন্তু সাধারণ মানুষ সহায়তা না করলে আমরা সফল হবো না। আমরা প্রয়োজন মতো কঠোর হচ্ছি সেটা ঠিক, তবে শুধুমাত্র লাঠিপেটা করে আর ফাইন তুলে অভ্যাস বদলানো যাবে না। লকডাউন উলঙ্ঘন করার ক্ষেত্রে প্রশাসন সম্প্রতি ফাইন তোলা শুরু করেছিল, এতে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা সংগ্রহ হয়েছে। তবে প্রশ্ন টাকার নয়, এতে যদি সচেতনতা বাড়তে থাকে তাহলে প্রত্যেকের লাভ।”

এদিন বৈঠকে জেলাশাসক, পুলিশসুপার, সাংসদ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি আধিকারিক এবং সমাজের প্রত্যেক স্তরের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।

Comments are closed.