নিজের বুদ্ধিকে সম্বল করে অপহরনকারীর কবল থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেন করিমগঞ্জ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ
অপহরণের পর গভীর জঙ্গল থেকে রাতের অন্ধকারে নিজের সাহসকে সঞ্চয় করে পালিয়ে বাঁচার মতো ঘটনা নিঃসন্দেহে সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। অনেকটা যেন হিন্দি সিনেমার মতো। কিন্তু নিজের বুদ্ধির জোরে এবং সাহসের উপর ভর করে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন করিমগঞ্জ কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান খান।
ঘটনায় প্রকাশ, শনিবার সন্ধ্যা রাতে মতিউর রহমান খানকে অপহরণ করে নিয়ে যায় কিছু দুষ্ট লোক। তিনি যখন মহাকাল থেকে ভাঙ্গায় তার বাড়িতে ফিরছিলেন তখন হঠাৎ তার সামনে এসে একটি অলটো গাড়ি থামে।তিনি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন বুঝে অপরিচিত দুই যুবক তাকে বাড়ির কাছে নামিয়ে দেবে বলে গাড়িতে উঠে আসার অনুরোধ করে। তিনি বেশি কিছু না ভেবে তাদের গাড়িতে উঠে যান। কিছুদূর যাবার পর আরও তিন যুবক গাড়িতে উঠে পড়ে। ততক্ষণে তিনি তার বাড়ির সামনে এসে পড়েন এবং তাকে এখানে নামিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু সেই যুবকরা সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ ও মুখ বেঁধে দেয় বলে মতিউর রহমান অভিযোগে জানান।
সেই অপহরণকারীর দল তাকে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে তার হাত ও কোমরে দড়ি বেঁধে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।অপহরণকারীরা তার কাছ থেকে দামি মোবাইল সেট এবং নগদ কিছু টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানা যায়। তারা খানের মোবাইল থেকে তার পরিবারের কাছে ফোন করে দশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণও দাবি করে। তারপর গভীর রাতে কোনো এক সময় অপহরণকারীর দল তাকে একা রেখে খাবার খেতে চলে যায়।সেই সুযোগটাকে কাজে লাগান তিনি। তিনি গাছের সঙ্গে বাঁধা কোমরের বাধন খুলে কোনোক্রমে সেখান থেকে পালান। কিন্তু প্রায় সারারাত ধরে তিনি গভীর জঙ্গলে অন্ধকারে রাস্তা খুঁজে বেড়ান। গভীর জঙ্গলে বিষাক্ত পোকা-মাকড়ের কামড়ে তার সমস্ত শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়, প্রচুর রক্ত ঝরে। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েন না।
অনেক ঘোরাঘুরির পর সূর্যোদয়ের আগেই মধুরবন্দ এলাকায় পৌঁছান। এই এলাকার স্থানীয়রা তার হাতের বাঁধন খুলে দেন। সেই সঙ্গে পুলিশে খবর জানায়।পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ওই স্থানে পৌঁছে তাকে পাথারকান্দি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে আহত মতিউর রহমানকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। দলে দলে লোক মধুবন এলাকায় ছুটে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। বর্তমানে পুলিশ অপহরণকারীর দলকে খুঁজছে এবং অপহরণের ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে বলে জানা যায়।
Comments are closed.