Also read in

"সাংবাদিক নিগ্রহের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে বুঝে নিতে হবে এতে অন্য কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে", তীব্র প্রতিক্রিয়া বরিষ্ঠ সাংবাদিকদের, খবর পৌঁছল মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত

কাছাড়ে একের পর এক সাংবাদিক নিহত হচ্ছেন, কাটিগড়া সম্প্রতি ইমাদ উদ্দিন মজুমদার নিগৃহীত হওয়ার আগে অন্তত তিনজন সাংবাদিককে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন। শনিবার রাতে সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার সাংবাদিক হিমু লস্করকে মলিন শর্মার মতো পিষে মারার হুমকি দেয় কাঁঠাল রোডের কিছু টিপার চালক। এতে সংবাদমহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। খবর পৌঁছে গেছে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কাছে। মিডিয়া উপদেষ্টা ঋষিকেশ গোস্বামী ফোন করে কাছাড়ের পুলিশ সুপারের কাছে এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

রবিবার বিকেলে ডিআইজি দিলীপ কুমার দে, জেলাশাসক কীর্তি জাল্লি, পুলিশসুপার বিএল মিনার কাছে পুরও ঘটনাটি তুলে ধরেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। পাশাপাশি সদর থানায় এব্যাপারে এজাহার দায়ের করেন হিমু লস্কর। ডিআইজি দিলীপ কুমার দে সঙ্গে সঙ্গে কাছাড়ের পুলিশ প্রশাসনকে এব্যাপারে কড়া পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেন। সন্ধ্যায় পুলিশসুপার কার্যালয়ে উপস্থিত হন শিলচর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শংকর দে, বরিষ্ঠ সাংবাদিক সুবীর দত্ত সহ শহরের একাংশ সাংবাদিকরা। হিমু লস্করকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার ঘটনার পাশাপাশি কাটিগড়া সাংবাদিক ইমাদ উদ্দিন মজুমদারের উপর হামলার ব্যাপারেও আলোচনা হয়। দুই ক্ষেত্রেই দোষীদের অতিসত্বর গ্রেফতার করার দাবি তোলেন তারা।

বরাক বুলেটিনের পক্ষ থেকে সংবাদ মহলের বরিষ্ঠ ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বিজয় কৃষ্ণ নাথ, যুগশঙ্খ পত্রিকা কর্ণধার

কাটিগড়ায় পুলিশের সামনে সাংবাদিক নিগ্রহ করা হচ্ছে অথচ তারা দাঁড়িয়ে দেখছেন, এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এদিকে শিলচরের এক সাংবাদিককে টিপা্রের চাকায় মারার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দুটি ঘটনায় অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং প্রশাসনকে এব্যাপারে সরব হওয়া উচিত। সাংবাদিকরা সমাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন, অতীতে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা নিগৃহীত হয়েছেন, অনেকের প্রাণ গেছে। এক নিহত সাংবাদিকের উল্লেখ করে আরেক সাংবাদিককে যেভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, এটা আমরা মেনে নিতে পারবোনা। আমি প্রশাসনের কাছে আবেদন করছি আপনারা প্রত্যেকে ড্রাইভারদের লাইসেন্স যাচাই করুন, এতে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে বলে আমার ধারণা।

নিলয় পাল, প্রান্তজ্যোতি দৈনিকের মুখ্য সম্পাদক

সারা দেশেই এখন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মনোভাব তৈরি হয়েছে। সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় হোক বা সামাজিক ক্ষেত্রে, সাংবাদিকরা বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন। আমরা একজন দক্ষ সাংবাদিক মলিন শর্মাকে হারিয়েছি, এবার আরেক সাংবাদিককে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সমাজের ক্ষেত্রে এটা অবশ্যই একটি অশনি সংকেত। আমরা চাই প্রশাসন এর বিরুদ্ধে তৎপর হোক না হলে ভবিষ্যৎ আরও ভয়ানক হতে পারে। যদি এই ঘটনার সঠিক তদন্ত না হয় এবং দোষীদের শাস্তি দেওয়া না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে এতে অন্য কোনো ইঙ্গিত রয়েছে। হয়তো বড় কোন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন যাকে প্রশাসন সমীহ করে।

সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকা কর্ণধার এবং সম্পাদক তৈমুর রাজা চৌধুরী

এক সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার সময় আরেক নিহত সাংবাদিকের প্রসঙ্গ টেনে আনা হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে অপরাধীরা একে অন্যের সঙ্গেই রয়েছে। মাফিয়ারা এত সাহস পাচ্ছে যে তারা পুলিশ বা সংবাদমাধ্যম দুটোকেই তোয়াক্কা করে না। কাটিগড়া পুলিশের সামনে সাংবাদিককে মারধোর করা হলো, তাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা হলো। প্রশাসনকে এব্যাপারে নজর দেওয়া উচিত এবং সর্বতোভাবে সাংবাদিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব নেওয়া উচিত। এটা শুধু একজন বা দুজন সাংবাদিকের সুরক্ষার কথা নয়, সমাজে সংবাদমাধ্যম এবং বাক-স্বাধীনতার সুরক্ষাও বটে।

অরিজিৎ আদিত্য, বার্তা লিপির মুখ্য সম্পাদক

দুটো ঘটনাই সমানভাবে নিন্দনীয়, একজন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয়েছে আরেকজনকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সাময়িক প্রসঙ্গ পত্রিকার সাহসী সাংবাদিক হিমু লস্কর সম্প্রতি একটি সংবাদ লিখেছিলেন, যার মধ্যে কোনও ভুল ছিল না। সেই সংবাদের সূত্র টেনে কিছু চালকরা তাকে প্রকাশ্যে প্রাণে মারার হুমকি দিল। আমি মনে করি, প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা সংবাদমাধ্যমে এব্যাপারে কিছুটা হলেও দায়ী। মলিন শর্মার মৃত্যুর পর যেসব বিধি-নিষেধ জারি করা হয়েছিল সেটা বেশিদিন মানা হয়নি, অথচ এব্যাপারে আমরা সংবাদকর্মীরা সোচ্চার হইনি। ঠিক সময়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে হয়তো আজ এই মুহূর্ত দেখার প্রয়োজন হতোনা। এই ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, আমাদের দায়িত্বে যেটুকু রয়েছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। প্রশাসন ভুল করলে ঠিক সময়ে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার দায় আমাদের।

মনোমোহন মিশ্র, গতি দৈনিকের মুখ্য সম্পাদক

সংবাদকর্মীদের কাজই হচ্ছে কোনও ঘটনার সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা, তারা অত্যন্ত পরিশ্রম করেন এবং জনসমক্ষে সত্য ঘটনা তুলে ধরেন। অথচ কারও সেই সংবাদ পছন্দ না হলে সাংবাদিকদের হুমকি দেয়। এটা অত্যন্ত কাপুরুষোচিত একটি স্বভাব। তবে এভাবে ভয় দেখিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করে দেওয়া যায় না। প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন আপনারা এদের প্রশ্রয় দেবেন না, নাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের ওপরও এর প্রভাব পড়বে।

দিলীপ কুমার, প্রেরণা ভারতীর মুখ্য সম্পাদক

যদি শিলচর শহরে এমন কিছু দুষ্কৃতী ঘোরাফেরা করে যারা প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের হত্যা করার হুমকি হতে পারে তাহলে আমরা আইন শৃঙ্খলার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তলানিতে এসে পৌঁছেছি। দুষ্কৃতীরা আর পুলিশকে ভয় করছে না, কারণ তারা জানে কেউ না কেউ তাদের পেছনে রয়েছেন। আজ যারা সংবাদমাধ্যমের ওপর চড়াও হচ্ছে কাল সাধারণ মানুষ বা বড় বড় নেতাদের উপর হামলা করবেনা এটা বলা যায়না। দুই বছর আগে আমরা সহকর্মী মলিন শর্মাকে হারিয়েছি, এবার আমাদের অন্য সহকর্মীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসন যদি তাদের দায়িত্ব পালন না করে তাহলে আমরা আরো উপর মহলে যেতে বাধ্য হব।

Comments are closed.