পাড়ায় কেউ পজিটিভ হলে বাড়িতেই চিকিৎসার জন্য 'এনওসি' দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল হাইলাকান্দি রোডের সুকান্ত সরণি
সম্প্রতি কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসার জন্য নতুন এসওপি ঘোষণা করেছিল। বরাক উপত্যকায় প্রথম এই পরিষেবার অনুমতি পেয়েছিলেন চিকিৎসক পিসি শর্মা। এর মূল তিনটি শর্ত হচ্ছে, এলাকাবাসীর সম্মতি, নিজস্ব ডাক্তার থাকা এবং প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি থাকার ব্যবস্থা। এখনও আমাদের চারপাশে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়ে অকারণে একটি ভয় রয়েছে। তবে এই সামাজিক সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো হাইলাকান্দি রোডের সুকান্ত সরণি। পাড়ার ডেভলপমেন্ট কমিটি সম্প্রতি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়, যারাই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন, প্রত্যেকের চিকিৎসা বাড়িতে থেকেই হবে। তবে আক্রান্তরা অ্যাসিম্পটোমেটিক হলেই এই পরিসেবা পাবেন।
সুকান্ত সরণিতে প্রায় ১০০ পরিবার রয়েছে। এখন পর্যন্ত এক পরিবারের শুধুমাত্র দুই ব্যক্তি এখানে পজিটিভ হয়েছেন। একজন পজিটিভ হয়ে শিলচর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরবর্তীতে তার ছেলে যখন পজিটিভ হন, পাড়ার ডেভলপমেন্ট কমিটি ঠিক করে তাকে বাড়িতেই রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে। এই সূত্রে বৈঠক করতে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এবার থেকে পাড়ায় যেকেউ পজিটিভ হলে তার চিকিৎসা বাড়িতেই হবে। শুধুমাত্র এনওসি দেওয়া নয়, প্রয়োজনীয় আরও পরিষেবার ক্ষেত্রে তারাই সাহায্য করবেন।
রোগীকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করার জন্য অনুমতিপত্র দেওয়া ছাড়াও প্রয়োজনে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা পাড়ার লোকেরাই করেছেন। নিজেদের পরিচিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা বলে রেখেছেন, প্রয়োজনে রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হবে। একটি চিঠি লিখে জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছেন তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এটি একটি অত্যন্ত সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। শিলচর শহরে এমনটাও হচ্ছে, পাড়ায় কোন ব্যক্তি পজিটিভ হলে যখন স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বাড়িটি বাইরে থেকে সিল করা হচ্ছে, সেই বাড়িতে সবজিওয়ালা সবজি বিক্রি করছে না, মাছওয়ালা মাছ বিক্রি করছে না। তাদের জিজ্ঞেস করলে বলছে, পাড়ার লোকেরা বলে দিয়েছেন এই বাড়িতে সবজি বা মাছ দিলে তাঁরা কিনবেন না। কেউ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেলে, বলা হচ্ছে, “পাড়াতে থেকে করোনা ধরে নিয়ে গেছে।” ভাইরাস যতটুকু সমাজের ক্ষতি করছে তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি করছে সাধারণ মানুষের মনের এই সংকীর্ণতা। একে দূর করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নানান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি সূত্র শ্মশানঘাটে করোনায় মৃত ব্যক্তির সৎকার করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের চেষ্টা হয়েছে। এতেও অনেকে বিরোধিতা করেছেন। এমন সময় দাঁড়িয়ে হাইলাকান্দি রোডের সুকান্ত সরণি এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে যা ভবিষ্যতে অনেক মানুষকে সাহস যোগাবে। হয়তো এই প্রতিবেদন বেরোনোর পর শিলচর শহর তথা উপত্যকার অন্যান্য পাড়ায় ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রচলন শুরু হবে।
Comments are closed.