অবশেষে ঘোষণা হল দুর্গা পুজো নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এসওপি
স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পুজোর এসওপি ঘোষণা নিয়ে নানা টালবাহানার পর শেষমেষ হিমন্তবিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার সকালে এটি ঘোষণা করলেন। রাত দশটার পর বন্ধ হচ্ছে পুজো মণ্ডপ, কিন্তু মূর্তির সাইজ নিয়ে কোনও বাধা নেই। রাত ৯ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে রেস্টুরেন্ট, কিন্তু রাস্তার পাশে খাবার দোকান খোলা যাবেনা। বিসর্জনে যাতে ভিড় না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, কিন্তু কতজন বিসর্জনে যাবেন এটা বলে দেওয়া হয়নি। পুজো মণ্ডপ বানানো নিয়ে কোন নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ না দিলেও বলে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মন্ডপ বানাতে। মন্ডপে ঢোকার এবং বেরোনোর আলাদা রাস্তা থাকতে হবে। পূজা মন্ডপ খোলা থাকতে হবে। পুজোর আয়োজক, পুরোহিত, স্বেচ্ছাসেবী সহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে পঞ্চমীর মধ্যেই কোভিড টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। দশমীর পর আরও একবার কোভিড টেস্ট করাতে হবে।
মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করা হয়নি, তবে দুজন পুরুষ একসঙ্গে চলতে পারবেন না। একজন মহিলা একজন পুরুষ চলতে পারবেন। পূজোর প্রসাদ বিতরণ চলবে না কিন্তু আয়োজকরা চাইলে প্যাকেট প্রসাদ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে অনেকগুলো পয়েন্ট।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুয়াহাটিতে সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করে সারা রাজ্যের জন্য এসওপি ঘোষণা করেছেন। তবে বলে দেওয়া হয়েছে বিকেলে মধ্যে দু’একটা সংশোধন করা হতে পারে।
১) পূজো আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রথমেই যেগুলো করতে হবে
ক) বারোয়ারি পুজো করতে হলে আয়োজকদের প্রথমে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
খ) জেলা প্রশাসন জেলার পুজো কমিটি/ আয়োজকদের নিয়ে অতিসত্বর একটি বৈঠক আয়োজন করবেন এবং কিভাবে স্বাস্থ্যবিভাগের প্রটোকল অনুযায়ী পূজা আয়োজন করা যায় সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। পুজো আয়োজন হবে কিন্তু কোনভাবেই যাতে কোভিড প্রটোকল না ভাঙ্গে এদিকে প্রত্যেককে নজর রাখতে হবে। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন পুজো কমিটিগুলোর পাশে থেকে সাহায্য করবে।
২) প্যান্ডেল বানানোর ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে
ক) প্যান্ডেল খোলামেলা হবে এবং বিভিন্ন দিকে দরজা রাখা হবে।
খ) ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে যাতে দর্শকদের উপস্থিতিতে দূরত্ব রাখা সম্ভব হয়। একসঙ্গে যাতে ৩০ জনের বেশী মানুষ জড়ো না হয় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে। যদি প্যান্ডেলের সাইজ ছোট হয় তাহলে এই সংখ্যা কমিয়ে ১০ পর্যন্ত আসতে পারে।
গ) সকালের অঞ্জলি প্রদান থেকে সন্ধ্যার আরতি, সবক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব এবং দর্শকের উপস্থিতিতে কোভিড নিয়মাবলী পালন করতে হবে।
ঘ) পুজোর প্যান্ডেলে ঢোকার এবং বেরিয়ে যাওয়ার আলাদা আলাদা গেট থাকতে হবে এবং যাতে কোনোভাবেই ভিড় না জমে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ঙ) মন্ডপের ভিতর ফ্লোর মার্কিং করতে হবে, দর্শনার্থীরা কোন দিকে ঢুকবেন, কোন দিকে বেরিয়ে যাবেন কোথায় থেকে প্রণাম করবেন পুরো বৃত্তান্ত ফ্লোর মার্কিংয়ের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিতে হবে।
চ) স্বেচ্ছাসেবীদের আগে থেকে ভালো করে প্রশিক্ষণ দিতে হবে, তারা যাতে পুরো ব্যাপারটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেন।
৩) পুজো মণ্ডপে স্যানিটাইজার রাখা এবং মাস্ক বাধ্যতামূলক
ক) প্রত্যেক দর্শনার্থীকে মাস্ক পরতেই হবে, মন্ডপে ঢোকার এবং বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তায় সেনিটাইজার রাখতে হবে। এব্যাপারে পুজো কমিটিকে নজরদারি রাখতে হবে।
খ) যদি কোনও দর্শনার্থী মাস্ক আনতে ভুলে যান, সেক্ষেত্রে আয়োজকদের কাছে অতিরিক্ত মাস্ক থাকতে হবে যেটা মণ্ডপে ঢোকার আগে দর্শনার্থীকে দিয়ে দেওয়া হবে।
গ) পুজো মণ্ডপ দিনে অন্তত দুবার পুরোপুরিভাবে সেনিটাইজ করতে হবে।
৪) মন্ডপের ভেতরের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে
ক) আয়োজকদের তরফে ঠিক করা স্বেচ্ছাসেবীরা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর নজরদারি রাখবেন, বিশেষ করে শারীরিক দূরত্বের ব্যাপারে।
খ) পুজো কমিটির সদস্য, পুরোহিত, তার সহযোগীরা এবং স্বেচ্ছাসেবীরা, প্রত্যেকের কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। অন্তত পঞ্চমীর দিনে পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করবে।গ) প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবীকে মাস্ক অথবা ফেইস শিল্ড ব্যবহার করতে হবে এবং তারা নিজেরাও যেন শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখেন, সেটা নজর রাখতে হবে।
ঘ) পুজোর যে মুহূর্তগুলো বেশি জনসমাগম সম্ভব, যেমন অঞ্জলি প্রদান, আরতি এবং প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি সময়ে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে যাতে কোনোভাবেই কোভিড প্রটোকল অমান্য করা না হয়।
ঙ) পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণ, অঞ্জলি প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে মাইক্রোফোন ব্যবহার করবেন, যাতে কম আওয়াজের জন্য ভক্তরা এক জায়গায় জড়ো না হয়ে পড়েন।
চ) যারা অঞ্জলি প্রদান করবেন তাদের বলা হচ্ছে, সম্ভব হলে বাড়ি থেকে ফুল-বেলপাতা নিয়ে আসবেন এতে শারীরিক দূরত্ব বজায় থাকবে এবং ফুল-বেলপাতা আদান প্রদানের মাধ্যমে কারও সংস্পর্শে আসতে হবে না।
ছ) কোনও ধরনের প্রসাদ বিতরণের অনুমতি থাকছে না। তবে আয়োজকরা চাইলে প্যাকেট প্রসাদ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রেও সাবধানতা বজায় রাখতে হবে।
৫) পুজোর দিনগুলোয় সাধারণ মানুষের চলাফেরার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে
ক) রাত দশটার মধ্যে প্রত্যেক পুজো প্যান্ডেল বন্ধ করে দিতে হবে। এই নির্দেশ পালন করার দায় থাকবে পুজো কমিটির উপর।
খ) দ্বিচক্রযান চলার ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে দুইজন পুরুষ এক সঙ্গে চলাফেরা করতে পারবেন না। একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা বা একজন পুরুষের সঙ্গে ১৫ বছরের নিচের শিশু এক বাইকে চলাফেরা করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রেও শুধুমাত্র দুজন ব্যক্তি বসতে পারবেন, তিনজন নন।
৬) পুজোর আগে, পুজোর দিনগুলোয় এবং পরবর্তীতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে
ক) পুজোর আগে, পুজোর দিনগুলোয় এবং পুজো পরবর্তী সময়ে কোন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা চলবে না। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের কড়া নির্দেশ, কোনভাবেই যাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা না হয়। নিয়ম ভাঙলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
৭) রাস্তার পাশে ছোটখাটো দোকান বা মেলা আয়োজন পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে
ক) দশমী থেকে শুরু করে বিসর্জনের পুরো সময় জেলা স্তরে ড্রাই-ডে ঘোষণা করা হবে।
খ) সব ধরনের রেস্টুরেন্ট বা স্থায়ী খাবার দোকান রাত ৯ টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। তবে দোকান খোলার ক্ষেত্রেও স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
গ) পূজোকে সামনে রেখে কোনও ধরনের মেলা আয়োজন করা চলবে না। রাস্তার পাশে কোনও খাবার দোকান বা অস্থায়ী রেস্টুরেন্ট খোলা চলবে না। এতে জনসমাগম হতে পারে, তাই দোকানগুলো বন্ধ করা হচ্ছে।
৮) স্থানীয় সংবাদপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াকে বলা হচ্ছে তারা যেন সচেতনতা বিষয়ক সংবাদ পরিবেশন করেন
ক) স্থানীয় সংবাদপত্র ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সংবাদ পোর্টালদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, তারা যেন পুজোর এই সময়ে কোভিড-১৯ নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতামূলক সংবাদ প্রচার করেন। পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, সেনিটাইজার, মাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে তারা যেন জনগণকে সচেতন করেন।
খ) কোনভাবেই যাতে ভুল তথ্য জনসমক্ষে প্রচার না হয় এদিকে তাদের নজর রাখতে হবে।
৯) পুজো উদ্বোধন নিয়ে যাতে বড় ধরনের অনুষ্ঠান না হয়
ক) পুজো প্যান্ডেলের উদ্বোধন অথবা বিসর্জন নিয়ে যাতে কোনভাবে বড় অনুষ্ঠান না হয়।
খ) প্রয়োজনে অনলাইনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাধ্যমে পুজো উদ্বোধন করতে পারেন, তবে তারা যেন মন্ডপে উপস্থিত না হয়ে কাজটি করেন, এদিকে নজর রাখতে হবে।
গ) এক্ষেত্রেও মাস্ক এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
ঘ) বিসর্জনের আগে পুজোর ঘাট পুরোপুরিভাবে সেনিটাইজ করতে হবে। ঘাটে কোনও ধরনের জনসমাগম চলবে না। একবারে একটি প্রতিমা ঘাটে প্রবেশ করবে, সেটা বিসর্জন হলে তার পরের প্রতিমা প্রবেশ করতে পারবে।
ঙ) বিসর্জনের প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন নির্দিষ্টভাবে প্ল্যান করবে। পুজো কমিটিগুলোকে আগে থেকে সময় দিয়ে দেওয়া হবে, তারা সেই নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিমা নিয়ে ঘাটে আসবেন। কোনও ধরনের শোভাযাত্রা হবে না, একটি প্রতিমার সঙ্গে ১০ জনের বেশি যেতে করবেন না। তবে প্রতিমার সাইজ কতটা হবে, বা এক কাঠামো করতে হবে কিনা এব্যাপারে নির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি।
১০) রাজ্য সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন পুজো আয়োজনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আয়োজকদের পাশে থাকবে। এছাড়া যেসব সামাজিক সংগঠন এসব কাজে সাহায্য করতে প্রস্তুত তাদের সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে। প্রশাসনের যেসব দায়িত্ব থাকবে সেটা হচ্ছে:
ক) অগ্নিনির্বাপক বিভাগের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি থাকতে হবে
খ) পুরসভা বা গাঁও পঞ্চায়েত স্তরে এলাকার স্বচ্ছতার দিকে নজর রাখতে হবে।
গ) বিদ্যুৎ বিভাগকে পুজোর সময় পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করার দিকে নজর রাখতে হবে। যদি কেউ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা পেতে চান সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত মাশুল নিয়ে তাদের পরিষেবা দিতে হবে।
ঘ) জেলা প্রশাসনের যেসব এলাকায় প্যান্ডেল বানিয়ে পুজোর অনুমতি দেবে, সেগুলোর সুরক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে।
ঙ) জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগকে পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহের দিকে নজর রাখতে হবে। যাতে উৎসবের মরসুমে পানীয় জল নিয়ে কোন ধরনের অসুবিধা না হয় তার দায়িত্ব এই বিভাগের উপর দেওয়া হয়েছে।
Comments are closed.