Also read in

নুরুদ্দিন ট্রফির ফাইনালে শিলচর, নতুন ইতিহাস রচনার পথে শমীক দাস-রাহুল সিংরা

রাজ্যের ক্রিকেটে এক নতুন ইতিহাস রচনার পথে শিলচর। মর্যাদাসম্পন্ন নুরুদ্দিন ট্রফি সিনিয়র আন্তঃজেলা ক্রিকেটের খেতাব থেকে আর মাত্র একধাপ দূরে শমীক দাস, রাহুল সিংরা। গুয়াহাটির বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে তিনদিনের সেমিফাইনাল ম্যাচে তেজপুর কে টেক্কা দিয়ে খেতাবি লড়াইয়ের টিকিট অর্জন করে নিয়েছে শিলচর। এবার মেগা ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বিশ্বনাথ চারিয়ালি। বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে ফাইনাল শুরু হবে ৩০ মে থেকে।

সিনিয়র ক্রিকেটের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত শুধু একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শিলচর। সেটা ২০০৭-০৮ মরশুমে। প্রকাশ ভগতের নেতৃত্বে। এবার ফের একবার শিরোপা জয়ের দারুন সুযোগ রয়েছে রাজীব দাসের ছেলেদের সামনে।

শনিবার সেমিফাইনালের তৃতীয় তথা অন্তিম দিনে কিছুটা চাপে ছিল শিলচর। তবে তেজপুরের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসের ৬৫ রানের লিড এই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিল। শিলচর কে এনে দিল ফাইনালের টিকিট। দ্বিতীয় দিনের শেষে জয়ের গন্ধ শুকছিল শিলচর। ৪৫ রানে এগিয়ে থাকলেও তেজপুরের হাতে ছিল ছয় উইকেট। এমন অবস্থায় সরাসরি জয়ের স্বপ্ন দেখছিল শিলচর। তবে শনিবার অনেক ভালো ব্যাটিং করল তেজপুর। একটা সময় ১১১ রানে ছয় উইকেট চলে গিয়েছিল তাদের। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮১ রানের বিশাল স্কোর খাড়া করে তারা। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে জুরগেন দাস অপরাজিত ৯৭ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলেন। এটাই তেজপুর কে বড়োসড়ো একটা স্কোরে পৌঁছে দেয়। প্রথম ইনিংসে তিন উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট শিকার করেন রাহুল সিং। ফলে সেমিফাইনালে রাহুল নিলেন মোট ৯ উইকেট। এর আগে তিনসুকিয়া ম্যাচে ১০ উইকেট শিকার করেছিলেন শিলচরের এই বাঁহাতি স্পিনার।

দ্বিতীয় ইনিংসে বড় স্কোর করলেও অনেকটা সময় নিয়ে ফেলে তেজপুর। লাঞ্চের কুড়ি মিনিট পর অলআউট হয় তারা। ‌ এতে শিলচরের কিছুটা লাভ হয়ে যায়। সরাসরি জয়ের জন্য শিলচরের সামনে টার্গেট ছিল ২১৭। দ্বিতীয় ইনিংসে ২২ ওভার খেলে বিনা উইকেটে ৭৬ রান তুলে নেয় শিলচর। এরপর দুই আম্পায়ারের সম্মতিতে ম্যাচ ড্র বলে ঘোষণা করা হয়। তবে নিয়ম অনুসারে প্রথম ইনিংসে লিড থাকায় ফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করে নেয় শিলচর। প্রথম ইনিংসে ৮৪ রানের দুরন্ত অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেছিলেন ওপেনার শুভম মণ্ডল। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি অপরাজিত থাকেন ৪২ রানে। আরেক ওপেনার প্রদীপ সরকার নট আউট থাকেন ৩০ রানে।

ফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করার দারুণ খুশি শিলচরের কোচ রাজীব দাস। তিনি বলেন, ‘ফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করায় ভালো লাগছে। ছেলেরা খুশি। সবচেয়ে বড় কথা এই জয়ের ফলে ছেলেদের আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়ে গেছে।’ শিলচরের কোচ আরো বলেন, ‘আজ কিন্তু আমরা চাপে ছিলাম। ওরা দ্বিতীয় ইনিংসে বিশেষ করে আজ তৃতীয় দিনে ভালো ব্যাটিং করেছে। তবে ওরা লাঞ্চের পর ও ব্যাটিং করায় অনেকটা সময় নষ্ট হয়েছে। যা আমাদের কিছুটা সুবিধে করে দিয়েছে।’ ওপেনার শুভম মণ্ডল ও রাহুল সিং এর আলাদা করে প্রশংসা করেন রাজীব দাস। তিনি বলেন, ‘দুটো ইনিংসেই শুভম অসাধারণ ব্যাটিং করল। একেবারে নিখুঁত ব্যাটিং। রাহুল ফের একবার দুর্দান্ত বোলিং করল।’ ফাইনালের ছাড়পত্র আদায় করে নিলেও দু একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত শিলচর কোচ। তিনি বলেন, ‘পেস বোলিংয়ে আমরা অনেকটাই পিছিয়ে। ফাইনালের আগে এ নিয়ে ভাবতে হবে। আরও একটা বিষয় হচ্ছে রাহুল একদিক থেকে ভালো বোলিং করে গেলেও অপরপ্রান্ত থেকে ধারাবাহিকভাবে সাহায্য পাচ্ছে না। এদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে।’

সেমিফাইনালের মতো কঠিন ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিলচর। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাজীব দাস বলেন, ‘দেখুন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল। এছাড়া আমরা একটা টার্গেট ধরে খেলতে চেয়েছিলাম। এজন্যই প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিই।’

উল্লেখ্য, এই ম্যাচে শিলচর পায়নি রনজি তারকা প্রীতম দাসকে। তার পরিবর্তে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অলরাউন্ডার শমীক দাস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর, তেজপুর ১৬৩ ও ২৮১ । শিলচর ২২৮ ও বিনা উইকেটে ৭৬।

Comments are closed.

error: Content is protected !!