মুসলমান জনসংখ্যা আটকাতে দুই সন্তান বিল আনতে কেন ভয় পাচ্ছেন হিমন্ত, প্রশ্ন কংগ্রেসের
বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার থেকে শুরু করে পরবর্তীতে অনেক ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যে মুসলমান জনসংখ্যা অন্যান্য সম্প্রদায়ের থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে জেপি নাড্ডা একই সুরে কথা বলেছেন। সেই সূত্র ধরেই কাছাড় জেলা কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার হিমন্ত বিশ্ব শর্মার উদ্দেশ্যে এক বার্তা দেওয়া হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের প্রশ্ন,”মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপির অন্যান্য নেতারা যদি মনে করেন মুসলমান জনসংখ্যা সত্যিই বৃদ্ধি পাচ্ছে তাহলে দুই-সন্তান বিল কেন আনা হচ্ছে না?”
বৃহস্পতিবার জেলা কংগ্রেসের কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে কাছাড় জেলার কংগ্রেসের দুই বিধায়ক মিসবাহুল ইসলাম লস্কর এবং খলিল উদ্দিন মজুমদার সহ অন্যান্য প্রার্থী এবং দলের পদাধিকারীরা অংশ নেন। বিজেপি সরকারের নানান ব্যর্থতার কথা তারা জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
জেলা কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, “বিজেপি এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তারা যেকোনও বিল যখন তখন এনে সেটা পাস করাতে পারে। অনেক জটিল বিল তারা গত কয়েক বছরে পাশ করিয়েছে, তাহলে বাধ্যতামূলক দুই-সন্তান বিল কেন আনতে পারছে না? হিমন্ত বিশ্ব শর্মা একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবেই নিজের পরিচয় বানিয়েছেন। অথচ তিনি মুখে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অনেক কথা বললেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে দুই সন্তান বাধ্যতামূলক করে দেওয়ার মত বিল তিনি পেশ করার সাহস দেখাতে পারছেন না। তিনি মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন সেটাও মিথ্যে এবং এই তথ্য আমরা দিচ্ছি না বরং কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকেই দেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া তারা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেন। তারা বলেন, “বিজেপির নেতারা অন্যান্য বিষয়ে জনগণকে এমনভাবে ঝামেলায় রাখেন যে মূল্যবৃদ্ধির কথা নিয়ে কেউ ভাবার সুযোগ পান না। জিনিসপত্রের দাম গত এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এবং এব্যাপারে বারবার প্রশ্ন করলেও সরকার নীরব থাকেন। নির্বাচনে জনগণকে ধর্মীয় ভাবাবেগের মাধ্যমে এমনভাবে বিভ্রান্ত করা হয়েছে যে তারা মূল বিষয়গুলো ভুলে বিজেপিকে ধর্মের ভিত্তিতে ভোট দিয়েছেন। এবার সরকারে এসে মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্ত করে অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিচ্ছেন দলের নেতারা।”
২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয় এবং কাছাড় জেলায় ৭ টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটি পেয়ে জয়ী হয় কংগ্রেস দল। বরাক উপত্যকার ১৫ টি আসনের মধ্যে তারা পেয়েছেন চারটি। ২০০১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা সরকারে থেকেও পরপর দুবার দলকে নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়তে হল, এব্যাপারে খুব একটা পর্যালোচনা হয়নি। বিশেষ করে এই বছর নির্বাচনে দলের মুখ থুবড়ে পড়ার কারণ নিয়ে এখনো পর্যালোচনাই করেনি দল, বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে বসে প্রকাশ্যে তা স্বীকার করলেন জেলা কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ দে। এছাড়া নির্বাচনে যেসব কংগ্রেস কর্মীরা দল বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এব্যাপারে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
বড়খলার বিধায়ক মিসবাউল ইসলাম লস্কর বলেন, “বিজেপির নেতারা যতই বড় বড় ভাষণ দেন না কেন স্থানীয় কৃষকদের তারা বঞ্চিত করে রেখেছেন। স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত চাল বা অন্যান্য জিনিসপত্র যদি সরকার কিনে নিয়ে সেগুলো জনগণের মধ্যে বিতরণ করতো, তাহলে এলাকার কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। একইভাবে বরাক উপত্যকায় সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়রা প্রাধান্য পাচ্ছে না। শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড বয় হিসেবে বরপেটা থেকে যুবকরা এসে যোগ দিচ্ছে। আমাদের অঞ্চলে কি এইটুকু যোগ্য প্রার্থী ছিল না? শুধু নির্বাচনের সময়ে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপির নেতারা পার পেয়ে যান।”
সম্প্রতি রাজ্য সরকারের নির্দেশে পুলিশ সারা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ড্রাগসের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন বড় পরিমাণের ড্রাগস ধরা পড়ছে এবং সঙ্গে আটক হচ্ছে দুষ্কৃতিরা। এই প্রসঙ্গ টেনে কংগ্রেস দলের প্রশ্ন, “হঠাৎ গত দুই মাসে এত লোক ড্রাগস পাচার করতে শুরু করেছে এমনটা তো হতে পারে না। তারা আগে থেকেই ব্যবসা করছিল এবং সেটা পুলিশ এবং সরকার জানত। এবার হঠাৎ করেই অভিযান চালানো হচ্ছে এবং ধরপাকড় শুরু হয়েছে, তারা এতদিন কাজটি করা হয়নি কেন? নিশ্চয়ই এর পিছনে অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বের সহায়তা ছিল।”
এছাড়া তারা কাগজ কল পুনরুদ্ধার, বিদ্যুতের মাত্রাতিরিক্ত মাশুল, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের নামে বিভিন্ন কেলেঙ্কারি ইত্যাদি বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করেন এবং বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন কাছাড়ের জেলা কংগ্রেস কমিটির সদস্যরা।
Comments are closed.