Also read in

Barak Book fair ends today; left a lot for book lovers, writes Dipak Sengupta

শেষ হলো বরাক বঙ্গ বইমেলা ২০১৮, বইপ্রেমীদের প্রাপ্তি অনেক

বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন, কাছাড় জেলা সমিতি আয়োজিত বরাক বইমেলা গত ৮ নভেম্বর,২০১৮ দক্ষিণ আসামের বরাক উপত্যকার প্রাণকেন্দ্র শিলচরের সার্কিট হাউস রোডে অবস্থিত বিপিন পাল সভাস্থলে শুরু হয়। উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আসাম সরকারের বন, পরিবেশ ও মৎস্য বিভাগের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, ছিলেন প্রবীন কবি জীতেন নাগ সহ “কবির শহর শিলচরের ” সুশীল সমাজের একাংশ। স্বাগত ভাষণে উদ্বোধনী সভার সভাপতি তৈমুর রাজা চৌধুরী বলেন, কি প্রতিকুলতার মধ্যে এই মেলা আয়োজন করতে হয়েছে।

এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০০৫ থেকে সম্মেলনের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে বরাকে বইমেলার আয়োজন হয়ে আসছে। কলকাতা পাবলিশার্স গিল্ড গত কয়েক বছর মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এবারের বইমেলায় গিল্ড কোনো সাহায্য করেনি। এবার দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা সহ স্থানীয় প্রকাশনী সংস্থার যোগদানে মেলা আয়োজিত হয়েছে। চল্লিশটি একশত বর্গফুটের ঘর অর্থাৎ প্রায় চার হাজার বর্গফুটের দোকানে প্রকাশনী সংস্থারা নিজেদের সম্ভার তুলে ধরেছেন।

বরাক উপত্যকা বঙ্গসাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন আন্দোলনের মঞ্চ, আসামে বাঙালিদের উপর নেমে আসা নাগরিকত্ব পরীক্ষার নামে হয়রানির বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততার মধ্যেও বইমেলার ধারাবাহিকতাকে নষ্ট না করার প্রত্যহ্বানকে মেনে নিয়ে কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে বইমেলাকে বাস্তবায়িত করেছেন।এবছরের বইমেলায় চারটি আলোচনা সভা,সাহিত্য সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বই উন্মোচন অনুষ্ঠান সহ ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে বক্তৃতা প্রতিযোগিতা ও কুইজ প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মহামহোপাধ্যায় পদ্মনাথ ভট্টচার্য বিদ্যাবিনোদ মহাশয়ের নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। পদ্মনাথ ভট্টাচার্যের সার্ধশতবর্ষ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত এই বই এক অমূল্য দলিল।
বইমেলায় মোট চারটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। ১১ নভেম্বর, রবিবার “সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, প্রত্যাহ্বান” শীর্ষক আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সঞ্জীব দেব লস্কর, শেখর দেবরায়, জয়শ্রী ভূষণ। সঞ্চালনায় ছিলেন দীপক সেনগুপ্ত। একইভাবে ১৩ নভেম্বরও এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনার বিষয় ছিল “বরাক উপত্যকার বহুভাষিক চরিত্র: ঐতিহ্যের অনুসন্ধান”। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন অমলেন্দু ভট্টাচার্য। আলোচক হিসেবে সভায় উপস্থিত ছিলেন আবিদ রাজা মজুমদার , এইচ ননী কুমার সিং ও সুদীপ্তা খেসরা। অন্য একটি আলোচনা সভা “অস্থির আসাম, পথের খোঁজে” তে আলোচনা করেন তৈমুর রাজা চৌধুরী, অরিজিৎ আদিত্য, ধর্মানন্দ দেব ও কৃষ্ণেন্দু রায়। সভায় সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন দীপক সেনগুপ্ত। ১৭নভেম্বর ” আর্থসামাজিক সংকটে বরাক, উত্তরনের সন্ধানে” শীর্ষক আলোচনা সভায় সঞ্চালনা করেন গৌতম প্রসাদ দত্ত। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, অরবিন্দ রায় ও অপ্রতিম নাগ।

আজ ছিল অন্তিম দিন। ১৮ নভেম্বর বিকেল চারটায় সমাপ্তি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিলীপ নাথ ও প্রবীণ শিক্ষাবিদ সুমিত্রা দত্ত। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে “বইকথা” প্রকাশিত হয়েছে, এতে মূলত বইমেলার সামগ্রিক প্রতিবেদন সহ সম্মেলনের প্রকাশিত গ্রন্থের তালিকা ও প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ রয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮ র স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য পিয়ালী দেবকে অনুরূপা বিশ্বাস স্মৃতি সম্মানে সম্মানিত করা হয়।

শিলচরে অনুষ্ঠিত দশ দিন ব্যাপী এই বইমেলা শিলচর তথা বরাক উপত্যকার বইপ্রেমীদের জন্য উৎসব থেকে কিছু কম ছিল না। শত ব্যস্ততার মধ্যেও আকাঙ্ক্ষিত বইটি খুঁজতে কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আকর্ষণে যারা বইমেলাতে ভিড় জমাতেন, তারা অবশ্যই প্রতীক্ষায় থাকবেন পরবর্তী বইমেলার জন্য।

Comments are closed.