"If there's a procession with open swords in town, why bother with candles?" Paper mill workers will hold dharna in front of the people's representatives' houses
২৫ জানুয়ারির সন্ধ্যেবেলা আগে থেকে অনুমতি নিয়ে আয়োজন করা মোমবাতি মিছিল আটকে দিয়েছিল প্রশাসন। কাছাড় এবং নগাঁও কাগজ কলের ৮০ জন মৃত কর্মচারির আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে মিছিলটি করা হয়েছিল, এমনটাই দাবি আয়োজকদের। তারা অসম্পূর্ণ মিছিলকে শেষ করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যেবেলা আবার মোমবাতি মিছিল করবেন তারা, তবে এবার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ধর্মীয় শোক মিছিল’। দুই কাগজকল বন্ধ হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৬৮ জন হিন্দু এবং ১২ জন ইসলাম ধর্মাবলম্বী কর্মচারির মৃত্যু হয়েছে। তাই এদিন শিলচর শ্মশান ঘাটে মা-কালীর কাছে মারা যাওয়া হিন্দুদের জন্য শান্তি কামনা করবেন কাগজ কল কর্মীরা। মৃত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের আত্মার শান্তির জন্য কলেজ রোড সংলগ্ন ফজল শাহ মোকামে প্রার্থনা করা হবে। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দফায় দফায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বাড়ির সামনে ধর্না দেবেন কাগজ কলের কর্মীরা।
কাছাড় ও নগাঁও কাগজ কলের জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি, এইচপিসি পেপারমিল রিভাইবাল অ্যাকশন কমিটি এবং কাগজ কল কর্মীদের পরিবারের তরফে শুক্রবার শিলচরে এক সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে গিয়ে মানবেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের সহকর্মীরা একে একে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে আমরা এক মোমবাতি মিছিল আয়োজন করেছিলাম। প্রশাসন আমাদের অনুমতি দেওয়ার পরেও পুলিশ সেটা আটকে দেয়, সঙ্গে সঙ্গে অনুমতি বাতিল করে নতুন নির্দেশ জারি করা হয়। তারা বলেছেন, মশাল এবং মোমবাতি মিছিল করা চলবে না, অথচ এই শহরে দাঁড়িয়েই প্রকাশ্যে তরোয়াল মিছিল হয়েছে, তাও কিছুদিন আগে। আমরা তাদের কাছে জানতে চাই তরোয়াল থেকে কি মোমবাতি বেশি বিপদজনক? আমরা আমাদের অসমাপ্ত মিছিল শেষ করব এবং প্রয়াত ও সহকর্মীদের শান্তির উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করব। এটা আমাদের ধর্মীয় অধিকার, ভারতবর্ষে প্রত্যেকের নিজের ধর্মীয় অধিকার পালনের অনুমতি দিয়েছে সংবিধান। আমরা আমাদের হিন্দু সহকর্মীদের জন্য মা কালীর কাছে প্রার্থনা করব এবং মুসলমান সহকর্মীদের জন্য দরগায় যাবো। আমাদের এবার আটকালে জোরালো প্রতিবাদ হবে, কারণ ভারতবর্ষে কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর আঘাত দেওয়া চলবে না।”
জনপ্রতিনিধিদের বাড়ির সামনে ধর্না দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, “কাগজ কল চালু হলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রায় দুইলক্ষ যুবককে রোজগারের সুযোগ করে দেওয়া যাবে। কাছাড় জেলায় তিন লক্ষের কাছাকাছি বেকার যুবক-যুবতী রয়েছেন, শুধুমাত্র একটা শিল্পের মাধ্যমে যদি এতজন মানুষকে রোজগারের সন্ধান দেওয়া যায়, তাহলে কেন সরকার কাজটি করছে না? এ ব্যাপারে আমাদের জনপ্রতিনিধিরা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা দফায় দফায় তাদের বাড়ির সামনে বসে ধর্না দেব, যদি এতে কোন লাভ হয়, যদি তাদের কানের কাছে গিয়ে কথাগুলো বললে তারা কিছুটা বুঝতে পারেন তাহলে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।”
কাগজ কল কর্মচারিদের পরিবারের ফোরাম রয়েছে, সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের পক্ষ থেকে অংশ নেন নবেন্দু দে। নিজেদের আর্থিক অবস্থার কথা বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় অনেকেই ব্যাঙ্ক লোনের ইএমআই দিতে পারছেন না, ফলে ব্যাঙ্কের তরফে তাদের উপর বারবার ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ আসছে। হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে অনেকেই বাড়ি ছাড়া হবেন, ব্যাঙ্ক তাদের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নেবে। তিনি বলেন, “জীবনের এই পর্যায়ে এসে হয়তো আমাদের ঠিকানা হবে গাছের তলায় বা শহরের কোনও রাস্তার কোনায়। একদিকে যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রত্যেক ব্যক্তিকে ঘর দেওয়ার কথা ফলাও করে প্রচার করছেন, তার সরকার থাকতেই আমাদের নিজের ঘর ছাড়া হতে হচ্ছে। আমার স্ত্রী এবং কন্যা রয়েছেন, ব্যাঙ্ক যেভাবে আমাদের শাসাতে শুরু করেছে, এবার আমরা নিজের শরীরের রক্ত বিক্রি করে টাকা দেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। শিলচরে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল আমাদের, আমি তার পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিলাম আমাদের রক্ষা করুন। তিনি বরাবরের মতোই আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিশ্বাস রাখতে এবং ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন। আমরা বিশ্বাস রেখে ধৈর্য ধরে চলার চেষ্টা করছি। তবে এতটা মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে আমাদের বিশ্বাস কতদিন টিকে থাকবে জানিনা।”
রিভাইটেল কমিটির পক্ষ থেকে বাহারুল ইসলাম বড়ভুইয়া বলেন, “আমি পেশায় একজন আইনজীবী, ভারতের আইনে কোথাও বলা নেই মোমবাতি মিছিল নিষিদ্ধ। শান্তিপূর্ণ মিছিলে কোনদিন বাধা দেয়নি ভারতীয় সংবিধান। অথচ স্থানীয় প্রশাসন নিজের ইচ্ছামত নিয়ম বানিয়ে আমাদের আওয়াজ দমানোর চেষ্টা করছেন। তারা শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতির উপর টিকে রয়েছেন কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না। গুজরাটের ব্যবসায়ীদের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মুকুব হয় অথচ বরাক উপত্যকার একমাত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য তাদের কাছে টাকাও নেই, ইচ্ছেও নেই। আমরা প্রতিবাদ করে যাবো যতদিন শক্তি থাকবে, আমাদের কথা একদিন জনগণের কানে পৌঁছবে এবং তারাই শাসকদের উচিত শিক্ষা দেবেন, অন্তত মনে এটুকু আশা রয়েছে আমাদের।”
Comments are closed.