The opportunity to cook for Pandit Jasraj is a moment that I will cherish forever; Joyshree Choudhury
যে মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতিচারণের উদ্দেশ্যে অনেক দুঃসাহসিকতার সাথে কলম ধরেছি ,তিনি হলেন ভারত গর্ব সঙ্গীত মার্তন্ড পণ্ডিত যশরাজজি। নিজের অনুভূতি থেকে এই কথাগুলো লেখার চেষ্টা করেছি, সেও একমাত্র ভগবানের আশীর্বাদ বলেই মনে করি।
পাঠকদের সুবিধার্থে বলি পণ্ডিতজিকে নিয়ে কিছু লেখার সাহস কোথা থেকে পেলাম, তা জানাতে একটু ভূমিকার প্রয়োজন।
আমার জন্মস্থান এবং বড় হয়ে ওঠা শহর শিলচরে। তারপর বিবাহ সূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা শহরের অধিবাসী অনেক বছর ধরে। নূতন করে জানানোর যদিও দরকার নেই তাও বলছি আমাদের বরাক উপত্যকার গর্ব প্রীতম ভট্টাচার্য্য (পণ্ডিত যশরাজজি’র সুযোগ্য শিষ্য) ও পৃথ্বী ভট্টাচার্য্য PJSM( পণ্ডিত যশরাজ স্কুল অফ মিউজিক)এর দায়িত্বে আছেন বহুবছর ধরে আটলান্টাতে।এই প্রতিষ্ঠানে, তাঁদের কাছ থেকে যারা শাস্ত্রীয়সঙ্গীতের শিক্ষার তালিম পাচ্ছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকে, আমার মনে হয় শিক্ষার্থীদের সেটা পরম সৌভাগ্য।
জন্মসূত্রে একই শহরে বড়ো হওয়া, পারিবারিক পরিচয় আর আমাদের কন্যা PJSM এর শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে তাঁদের সাথে আমাদের সম্পর্ক নিবিড়।
২০১৭ সালের জুন মাসে জানতে পারলাম যে আটলান্টাতে পণ্ডিতজি’র অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। আর সে উপলক্ষে বিভিন্ন কাজের জন্য volunteer group বানানো হবে, আমি যোগদান করতে আগ্রহী কি না? এই সুযোগ তো আমার কাছে পরম প্রাপ্তি!
অনুষ্ঠানের জন্য যেদিন তিনি আটলান্টা পৌঁছালেন সেদিনের রাতের খাবার রান্না করার দায়িত্ব ছিল আমার। বিশুদ্ধ শাকাহারী তিনি। সেদিন রান্না করার সময় শুধু মনে হয়েছে কিছু না ভুল করি, এই সুযোগ তো আমার কাছে দেবতার ভোগ রান্না করার মতই। পণ্ডিতজি আটলান্টা’তে যাদের বাড়ি ছিলেন সেখানে আমরা পৌঁছানোর পর , কর্মকর্তারা আমি রান্না করে এনেছি বলে আমাকেই পরিবেশন করে দিতে বললেন। আমি তো যারপরনাই আনন্দিত , অভিভূত।আমি ,আমার স্বামী ও কন্যা তিনজনই গেছিলাম সেদিন। সামনে থেকে দেখলাম যশস্বী পণ্ডিত যশরাজ জি’কে, আমরা তো বাকরুদ্ধ।সে এক দিব্যানুভুতি। খুব স্বল্পাহারী। খাওয়া শুরু করার আগে , সারাদিনের জার্নিতে নিজে এত পরিশ্রান্ত থেকেও বারবার জিজ্ঞাসা করছিলেন সেখানে উপস্থিত সবার খাওয়া হয়েছে কি না। আমার মাথায় শুধু ঘুরছিলো একটা কথাই ,এইরকম একজন গুণী ব্যক্তি তাঁর ব্যাক্তিত্ব কতটা “মহান” ।২০১৮ সালেও তিনি আটলান্টা এসেছিলেন, সেই ঘটনা যেন আবার প্রত্যক্ষ করেছি। খাওয়া শুরু করার আগে জানতে চাইছিলেন উপস্থিত সবার খাওয়া হয়েছে কি না।
২০১৭ তে অনুষ্ঠানের দিন খুব সম্ভবত জুলাইয়ের ৩০ তারিখ, সকল কর্মকর্তা অনুষ্ঠানের আয়োজনে Venue তে ব্যস্ত ছিলেন । ২/৩ জন PJSM এর শিক্ষার্থী আর আমি ছিলাম পণ্ডিতজির দুপুরের খাবারের দায়িত্বে। খাবার পরিবেশন করে সামনে ছিলাম, সাহস করে হিন্দিতে কিছু একটা বলেছিলাম উনি যখন বুঝলেন আমি বাঙালি , স্পষ্ট বাংলায় বললেন বাংলায় কথা বলতে। সেদিনের অনুভূতি আমি ভাষায় হয়তো ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারবো না।
আটলান্টার “Rialto Center for Arts” এ অনুষ্ঠান হয়েছিল সেবারে। সেই প্রথম সামনে থেকে তার অনুষ্ঠান দেখার সৌভাগ্য হল। আমার মত অজ্ঞ লোকের পক্ষে এই মহান সঙ্গীত ব্যক্তিত্বের গায়কি বোঝার ক্ষমতা না থাকলেও এইটুকু বলতে পারি সুরের জাদুতে এক দৈবিক পরিবেশে সম্মোহিত হয়ে শুনছিলাম তাঁর অনুষ্ঠান। বিশাল হলে pin drop silence, শুধুই সুরের মুগ্ধতা। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে সে দিনটি।
আগেই উল্লেখ করেছিলাম ২০১৮ সালে আরেকবার সৌভাগ্য হয়েছিলো তাঁকে দেখার, অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ। তাঁর কথা, গায়কি শোনা বা দেখা এক দিব্যদর্শন।
পণ্ডিত যশরাজজি আজ শারীরিক ভাবে এই জগতে না থাকলেও তার সৃষ্টি, শিক্ষা,আর শিষ্যদের দ্বারা ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে বিরাজমান থাকবেন সবসময়।
এই লেখার মাধ্যমে স্মৃতির খাতার এক মূল্যবান পাতা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম মাত্র, সাথে অসংখ্য ধন্যবাদ PJSM , প্রীতম ভট্টাচার্য্য ও পৃথ্বী ভট্টাচার্য্যকে জীবনের এই অমূল্য প্রাপ্তির সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
Comments are closed.