Also read in

'এসো বলি' সংস্থার জন্মলগ্নে শ্রীজাত, তীব্র উত্তেজনা শিলচরে

‘এসো বলি’ নামের সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে একটি নতুন সংস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শনিবার সন্ধ্যায় কবি শ্রীজাতের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনামূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় শিলচরে।কবি শ্রীজাত ‘এসো বলি’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন।

রিয়া হোটেলে শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর একদল মানুষ হঠাৎ করে হলের ভেতরে ঢুকে পড়েন। এক প্রত্যক্ষদর্শী আমাদের জানালেন, “কোনও ব্যানার ছাড়া কে বা কারা হঠাৎ করে হলের ভেতরে ঢুকে কবিকে নানাবিধ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে শুরু করলে এখানের উপস্থিত মানুষ উত্তেজিত হয়ে তাদের প্রতিরোধ করেন। আর এরই ফলে প্রচণ্ড এক চূড়ান্ত হট্টগোলের সৃষ্টি হয়।” প্রত্যক্ষদর্শী আরও উল্লেখ করলেন, হোটেলের ভেতরে শ্রীজাত সহ প্রচুর সংখ্যক শিলচরের মানুষ গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পুলিশ থাকা অবস্থায়ও গৃহবন্দি অবস্থায় আটকে পড়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। হোটেলের ভেতরে প্রচুর সংখ্যক কম বয়সের এবং সেইসঙ্গে বৃদ্ধ মহিলারাও রয়েছেন।

হলে ঢোকার অনেকক্ষণ আগে থেকেই হোটেলের বাইরে কিছুসংখ্যক লোক বিক্ষোভ প্রদর্শন করছিল। পরে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে হোটেলে ইট পাথর ছোড়া সহ ভাংচুরেরও খবর পাওয়া যায়। প্রায় ২৫০ জন প্রতিবাদকারীরা ‘জয় শ্রীরাম’, ‘টিএমসি দালাল শ্রীজাত হায় হায়’ স্লোগান দিতে থাকেন।

এদিন স্বামীজির জন্মদিনে তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে অনুষ্ঠানের শুরু হয় যথাযথ মর্যাদায়। অনুষ্ঠান চলছিল তার নিজস্ব ছন্দে। আমন্ত্রিত বামপন্থী কবি শ্রীজাত আজকের সময় কালে স্বামীজির ভূমিকা নিয়ে ১০ মিনিটের বক্তব্য রাখার পরই শুরু হয়ে যায় হুলুস্থুল। জানা যায়, তার কাছ থেকে মাইকও কেড়ে নেওয়া হয়। শুরু হয়ে যায় প্রতিবাদী স্লোগান। তাদের প্রতিহত করতে হলের ভেতরে উপস্থিত অনেকেই প্রতিবাদ করে উঠেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী কবি অনেকবারই বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দু হয়েছেন। কারণ তার হিন্দু বিরোধী কবিতাগুলি হিন্দু ভগবানকে অপমান করে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে অনেকের অভিমত। তাই অতিথি হিসেবে শ্রীজাত আমন্ত্রিত বলে খবর পাওয়ার পর থেকেই ডানপন্থী দলগুলি এই অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। এমনকি এই অনুষ্ঠানের আয়োজনের অনুমতি বাতিল করার জন্য প্রশাসনের কাছে জেলা উপায়ুক্তকে একটি স্মারক পত্রও জমা দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যায়।

এদিকে এডিশনাল এসপি রাকেশ রেড্ডি বলেন, কলকাতায় বসে কেউ যদি ফেসবুকে কিছু পোস্ট করেন, তবে এটি কাছাড় প্রশাসনের অধীনে আসে না। তবে শিলচরে এ ধরনের ঘটনা অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক ব্যাপার। তিনি ঘটনার ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি একটি ‘ক্লোজড ডোর ইভেন্ট’ এবং সংগঠকরা এই অনুষ্ঠানটি করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত অনুমতি গ্রহণ করেছেন এবং তারা তাদের অনুষ্ঠানে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী যে কাউকে আমন্ত্রণ জানাতেই পারেন।

এখানে আরও উল্লেখ করা যেতে পারে, শ্রীজাত তার কবিতা “উড়ন্ত সব জোকার” এর জন্য আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৪ সালে। তারপর ২০১৪ সালে মিশর রহস্য থেকে “বালির শহর” এর জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা গীতিকারের পুরস্কার পান। ‘ ‘কর্কটক্রান্তির দেশ’ কবিতার জন্য একাডেমি পুরস্কারেও ভূষিত হন তিনি।শিলচরের কবিতা অনুরাগীরা এদিন তার কবিতা শোনার জন্য সমবেত হয়েছিলেন।

Comments are closed.