২৪ ঘন্টায় মেডিক্যালে মারা গেলেন পাঁচজন, আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ৯৫ জন করোনা আক্রান্ত
গত ২৪ ঘন্টায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঁচজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এযাবত এটাই একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। তবে তার থেকেও চিন্তাজনক বিষয় হচ্ছে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ আইসিইউ শয্যার মধ্যে মাত্র পাঁচটি খালি আছে। হাসপাতালের সহকারি অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর গুপ্ত জানিয়েছেন, শনিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২১১ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে ৯৫ জন রয়েছেন আইসিইউ ওয়ার্ডে এবং বাকিরা সাধারণ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। অক্সিজেনের সাহায্যে চিকিৎসাধীন ১১৭ জন এবং ভেন্টিলেশনে রয়েছেন ১৬ জন ব্যক্তি।
শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বরাক উপত্যকায় একমাত্র সরকারি হাসপাতাল যেখানে আইসিইউ পরিষেবা রয়েছে। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আগে হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে চল্লিশটি আইসিইউ ছিল। গতবছর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছিলেন, তিন মাসের মধ্যে অতিরিক্ত ৬০টি আইসিইউ শয্যা গড়ে তোলা হবে। যদিও কাজটা দীর্ঘদিন ধরে আটকে ছিল তবে পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে তড়িঘড়ি সেটা সম্পন্ন হয়েছে। এখন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ডে ১০০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন হাসপাতালের রিপোর্টে বলা হচ্ছিল আইসিউতে ৪০জনের কাছাকাছি লোক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে শনিবার সেটা হঠাৎ করেই পাল্টে গেছে, এদিন হাসপাতালের রিপোর্টে বলা হয়েছে আইসিইউতে রয়েছেন ৯৫ জন লোক চিকিৎসাধীন, অর্থাৎ মাত্র পাঁচটি শয্যা খালি রয়েছে।
বরাক উপত্যকায় প্রায় ৪০ লক্ষ লোকের বসবাস, এখানে যেকোনও সময় ১০০ জন আইসিইউতে থাকার মতো পরিস্থিতিতে পৌঁছে যাওয়া অসম্ভব ব্যাপার নয়। গত ১০ দিনের করোনায় মৃত্যুর ঘটনাগুলো যাচাই করে দেখলে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, হাইলাকান্দি এবং করিমগঞ্জ সহ কাছাড় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের আক্রান্তদের মৃত্যুর হার বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন অনেক রোগী প্রথমদিকে সংক্রমণ হওয়ার পরেও বিষয়টিকে অত্যন্ত হালকা ভাবে নিচ্ছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার পর তারা হাসপাতালে আসছেন। এসব রোগীকে বাঁচানোর জন্য হাসপাতালে চিকিৎসকদের খুব একটা কিছু করার সুযোগ থাকেনা।
ডাঃ ভাস্কর গুপ্তের তরফে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করিমগঞ্জের মনিগ্রামের বাসিন্দা রথিধর নন্দি শুক্রবার দুপুরে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। এদিন রাতেই তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর।
কাছাড় জেলার দুর্গানগর পঞ্চম খন্ডের বাসিন্দা দীপক শীল মাত্র ৩৪ বছর বয়সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ৮ মে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তাকে ভেন্টিলেশনে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছিল। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছাড়াও তার শরীরে অন্যান্য উপসর্গ ছিল, তার শরীরে ডায়াবেটিস ছিল এবং তিনি কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। একসময় অক্সিজেনের মাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। শুক্রবার রাত সাড়ে দশটায় হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে তার মৃত্যু হয়।
কাছাড় জেলার কাবুগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা নীলমণির সিংহ বুধবার শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তার শরীরে করোনা ভাইরাস ছাড়া অন্যান্য সমস্যা ছিল এবং অক্সিজেনের মাত্রা অত্যন্ত কম ছিল। আইসিইউ ওয়ার্ডে তাকে ভেন্টিলেশনে রেখে অক্সিজেনের সাহায্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। শনিবার বিকেল পাঁচটা কুড়ি মিনিটে তার মৃত্যু হয়, মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
শিলচর রাঙ্গিরখাড়ি এলাকার অজিত কুমার মোদক ৯ মে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যা ছাড়া তার শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছিল। শনিবার সকাল ১০ টা ২৫ মিনিটে তার মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
শিলচরের বাসিন্দা উৎপল বর্মন ৬৫ বছর বয়সে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ১০ মে তিনি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তার মৃত্যু হয়েছে।
Comments are closed.