Also read in

Emphasis on mental health: Event held at Silchar

“মানসিক অবসাদগ্রস্তদের তাচ্ছিল্য করা ভারতবর্ষে দণ্ডনীয় অপরাধ, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন,” বললেন জাস্টিস এন কোটিশ্বর সিংহ

সমীক্ষায় বলছে পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রতি পাঁচজনের মধ্যে অন্তত একজন ব্যক্তি মানসিক অবসাদে ভোগেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে দৈনন্দিন জীবনে মাত্রাতিরিক্ত চাপ। আসাম স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটির উদ্যোগে রবিবার শিলচরে আদালত চত্বরে এব্যাপারে একটি সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গৌহাটি উচ্চতর ন্যায়ালয়ের জাস্টিস এন কোটিশ্বর সিংহ, জাস্টিস সুমন শ্যাম, জেলা সেশন জজ দারেক উল্লাহ, জেলাশাসক কীর্তি জল্লি, পুলিশ সুপার বিএল মিনা সহ অন্যান্যরা এতে অংশ নেন। অতিথিরা বলেন, “মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ব্যক্তিদের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম গতবছর গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়া চলাকালীন কোনওভাবে যাতে মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত ব্যক্তিদের অধিকার খর্ব না হয়।”

আদালতের লাইব্রেরি চত্বরে এদিন সকাল দশটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে মুখ্য বক্তা হিসেবে নিজের কথা তুলে ধরতে গিয়ে জাস্টিস এন কোটিশ্বর সিংহ বলেন, “ভারতীয় সংবিধানের শুরুতেই বলা হয়েছে ভারতবর্ষের নীতি হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তির সমমর্যাদা এবং সমান অধিকার। আমাদের চারপাশে যে সব ব্যক্তিরা মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত, তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রত্যেকের কর্তব্য। ২০১৭ সালে এক্ষেত্রে একটি আইন গড়ে তোলা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক মানসিক অবসাদগ্রস্থ ব্যক্তির সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার অধিকার রয়েছে, কেউ যদি এতে হস্তক্ষেপ করে, সেটা এখন ভারতবর্ষে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত সমাজের ব্যক্তিরা এসব ব্যাপারে অবগত এবং অনেকেই এর প্রতিবাদ করতে জানেন। কিন্তু সমাজের পিছিয়ে পড়া স্তরে এখনও এব্যাপারে ন্যূনতম সচেতনতা নেই। আমাদের এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তিকে সচেতন করে তোলা।”

পুলিশসুপারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক থানায় অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের আলাদাভাবে দেখার জন্য ইউনিট থাকতে হবে। প্রত্যেক পুলিশকর্মীকে বুঝিয়ে দিতে হবে, মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিকে যদি কোনও অভিযোগে গ্রেফতার করতে হয়, তার জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকে। তাদের পরিস্থিতির সঙ্গে মানসিক অবসাদের যোগসূত্র কোনভাবেই সংবাদমাধ্যমে বা জনসমক্ষে তুলে ধরা চলবে না, কিন্তু সেই ব্যক্তিকে সহানুভূতির মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ ইত্যাদি করতে হয়। এব্যাপারে যে এসওপি রয়েছে সেটা প্রত্যেক পুলিশকর্মীর কাছে থাকতে হবে এবং তারা এব্যাপারে অবগত থাকবেন এটাই নিয়ম।”

তিনি কাছাড়ের ডিস্ট্রিক্ট লিগাল সার্ভিস অথরিটির কাছে আবেদন রাখেন তারা যেন যত বেশি সম্ভব এব্যাপারে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করেন। কাছাড়ের জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার আশ্বাস দেন, এক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ সহযোগিতা করবেন।

জাস্টিস সুমন শ্যাম বলেন, “সুস্থ সমাজ হিসেবে আমাদের প্রথম কর্তব্য হচ্ছে যারাই দুর্বল তাদের পাশে থেকে সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখানো। আমাদের সমাজে এখনও মানসিক অবসাদগ্রস্ত হলে লোকে ব্যঙ্গ করে, অনেকে পাগল বলে আখ্যা দিতে থাকে। তবে আমার বার্তা এইটুকুই, পুলিশ, আইনব্যবস্থা এবং প্রশাসন প্রত্যেক মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন।বিশেষ করে পুলিশের কর্তব্য হচ্ছে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি দায়িত্বশীল এবং সহানুভূতিশীল হওয়া। নতুন এসপি অনুযায়ী, প্রত্যেক জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট স্তরের আধিকারিকরা এক্ষেত্রে সচেতনতা ছড়ানোর কাজ করবেন। এখন ইন্টারনেটের যুগ, প্রত্যেক পুলিশকর্মীর কাছে ফোর-জি মোবাইল থাকবে এবং যেকোনও ব্যক্তি সাহায্য চাইলে তারা তার পাশে দাঁড়াবেন। এর আওতায় পড়ছেন স্বয়ং পুলিশসুপারও। যারা জেলে বন্দি আছেন তাদের অধিকার রয়েছে নিজের মামলা কতটুকু এগোচ্ছে এটা জানার। এখন ভারতীয় আইন ব্যবস্থায় প্রত্যেক মামলার বিবরণ অনলাইনে আপলোড করা হয়। তাই পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেট-স্তরের আধিকারিকরা অপরাধীদের এব্যাপারে অবগত করাবেন। যদি নির্দেশ নামা ইংরেজিতে থাকে এবং অপরাধী ইংরেজি না বুঝে, সেক্ষেত্রে স্থানীয় ভাষায় তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে তাদের মানসিক অবসাদগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।”

জেলাশাসক কীর্তি জল্লি বলেন, “আমাদের সমাজের আসল সমস্যা এটা নয় যে খারাপ মানুষ খারাপ কাজ করছে, সমস্যা হচ্ছে ভালো মানুষ সব জেনে চুপ করে থাকেন। মানসিক অবসাদ এখনও আমাদের কাছে একটি উপেক্ষিত বিষয় যেটা নিয়ে সমাজে অনেকেই কথা বলতে সাহস পাননা। তবে ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় আব্রাহাম লিনকন থেকে শুরু করে বিশ্ববিখ্যাত গায়ক, খেলোয়াড়, লেখক, নির্দেশক, কবি, রাজনীতিবিদ অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগেছেন এবং তারা সেটা প্রকাশ্যে বলেছেন। এব্যাপারে আলোচনা করা প্রয়োজন, কেননা মানসিক অবসাদগ্রস্ত রোগী নিজের ক্ষতি করার পাশাপাশি জেনেশুনে বা অজান্তেই সমাজের ক্ষতি করতে পারে। কিছু বছর আগে আমেরিকায় এক মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছিল এবং অনেকের মৃত্যু হয়। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতিতে মানুষ বাধ্য হয়ে ঘরে থেকেছিলেন। লক্ষ লক্ষ লোক চাকরি হারিয়েছেন, নিজেদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, এরপর মানসিক বিষাদ চলে আসা অসম্ভব নয়। তাই আমাদের প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে, এমন কোনও ব্যক্তি অবসাদে ভুগছিলেন কিনা, প্রয়োজনে তার পাশে দাঁড়িয়ে খানিকটা সহানুভূতি দেখাতে হবে। আমি আসাম লিগাল সার্ভিস অথরিটির সদস্যদের সাধুবাদ জানাচ্ছি আপনারা কাছাড় জেলায় এমন একটি অনুষ্ঠান করেছেন বলে।”

অতিথিদের বক্তব্যের পর একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব আয়োজন করা হয়, এতে চিকিৎসক প্রসেনজিৎ ঘোষ জিজ্ঞেস করেন কাছাড় জেলায় এব্যাপারে রিভিউ বোর্ড গড়ে তোলার কোন পরিকল্পনা রয়েছে কিনা? এর উত্তরে জাস্টিস এন কোটিশ্বর সিংহ বলেন, “এধরনের বোর্ড গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এখনও এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশ জারি করা হয়নি।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধীক্ষক ডাঃ অভিজিৎ স্বামী, আসাম স্টেট লিগাল সার্ভিস অথরিটি সম্পাদক নয়ন শংকর বড়ুয়া, হাইলাকান্দি জেলা আদালতের বিচারক তৃপ্তি আড়ি, করিমগঞ্জ আদালতের বিচারক দেবাশীষ ভট্টাচার্য, তিন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন আধিকারিকরা।

Comments are closed.

error: Content is protected !!